
অপটিক্যাল ফাইবার কি ? অপটিক্যাল ফাইবার কিভাবে কাজ করে ?
অপটিক্যাল ফাইবার কি ? অপটিক্যাল ফাইবার কিভাবে কাজ করে ?
বর্তমান সময়ে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তারা অনেকেই অপটিক্যাল ফাইবার এর বিষয়ে শুনে থাকবেন। ইন্টারনেট এর ক্ষেত্রে ডাটা গুলোকে কিভাবে এতটা দ্রুত পাঠানো ও গ্রহণ করা হয় অপটিক্যাল ফাইবার এর মাধ্যমে।
কিভাবে দূরসঞ্চার এতটা দ্রুত হয়ে যাওয়া টা সম্ভব। এই সকল প্রশ্ন অনেকের মনে আসতে পারে। কিন্তু এই সকল প্রশ্নের উত্তর যুক্ত হয়ে আছে অপটিক্যাল ফাইবারের সাথে। অনেকে এই ফাইবার মানে কি এই সম্পর্কেও জানে না।
তাই আজ আমি এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাকে জানাব অপটিক্যাল ফাইবার কি? অপটিক্যাল ফাইবার কিভাবে কাজ করে এই সম্পর্কে জানাবো । আপনি যদি পুরো তথ্য জানতে চান। তাহলে নিচে দেওয়া তথ্য গুলো শেষ পর্যন্ত মনযোগ দিয়ে পড়ুন।
অপটিক্যাল ফাইবার কি ?
অপটিক্যাল ফাইবার হচ্ছে এক ধরণের পাতলা তার যাকে কাচ বা প্লাস্টিক এর দ্বারা তৈরি করা হয়। উক্ত ফাইবার তার গুলো দেখতে প্রায় মানুষ এর চুলের মতো।
অপটিক্যাল ফাইবার তার গুলোকে এমন একটি প্রযুক্তি বলে বলা যেতে পারে। যে গুলোর মাধ্যমে তথ্য সংক্রমণ করা হয়। ডাটা বা তথ্য সংক্রমন বা আদান প্রদান করার জন্য আসলে লাইট ব্যবহার করা হয়।
ফাইবার তার এর মধ্যে দিয়ে আলোর মাধ্যমে ডাটা গুলোকে ট্রান্সফার করে থাকে। এভাবে বিদ্যুতের তুলনায় হাজার গুন দ্রুত তথ্য গুলোকে এই অপটিক্যাল ফাইবার তার এর মাধ্যমে ট্রান্সফার করা সম্ভব হয়।
অপটিক্যাল ফাইবার বিদ্যুতের সঞ্চার করার হয় না কিন্তু আলোর সঞ্চার করা হয়। তাই এই তার এর মাধ্যমে ইনফরমেশন বা ডাটা হাজার গুন দ্রুত ভাবে ট্রান্সফার হয়ে থাকে।
অন্যান্য অনেক তার গুলোর তুলনায় উক্ত আধুনিক প্রযুক্তি ফাইবার তার গুলো অনেক দামী হয়ে থাকে। এই তার এর মধ্যে দিয়ে ডাটা প্রায় তিন লক্ষ কিলোমিটার প্রত্যেক সেকেন্ড এর দ্রুততা স্পীডে ভ্রমণ করে থাকে।কিন্তু উক্ত দ্রততা আলো এবং এই আলোর দ্রুততার মাধ্যমে ডাটা গুলো ট্রান্সফার করা হয়।
অপটিক্যাল ফাইবার কিভাবে কাজ করে ?
ফাইবার কিভাবে কাজ করে, এই উত্তর জানার আগে আপনাকে আরো কিছু বিষয় জানতে হবে। আসলে অপটিক্যাল ফাইবার সম্পুর্ণ রুপে Total Internal Reflections এর নীতির উপর কাজ করে থাকে।
এখানে আলোক রশ্মি গুলোকে ব্যবহারে কের ভারী পরিমাণের তথ্য প্রেরণ করা হয়। ক্যাবলের মধ্যে আলোর ভ্রমণ একটি পয়েন্ট থেকে আরেকটি পয়েন্ট পর্যন্ত চলতে থাকে। কিন্তু তার এর ভেতরে আলোর ভ্রমণ কিন্ত্র একেবারে সমান্তরাল বা সমতল ভাবে হতে পারে না।
তাই ফাইবার তার গুলোর আকারে সমান পরিমান হয় না। তাই আলোর রশ্মি গুলো তার এর ভেতরে বার বার বাউন্স খেয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। অপটিক্যঅল ফাইবারের দ্বারা যেখানে ডাটা গুলোকে গ্রহণ করা হয়। সেখানে একটি Transmitter লাগানো থাকে।
Transmitter এর সাথে যুক্ত এই ফাইবার তার এর মধ্যমে ডাটা গুলোকে আলোর মাধ্যমে পাঠানো হয়। Transmitter টি Electric Pulse Information গুলোর সমাধান কোরে সে গুলোকে লাইপ Pulse এর রুপে অপটিক্যাল ফাইবার লাইনে প্রেরণ করে দেয়।
যে ডিজিটাল ডাটা গুলোকে লাইট pulse এর রুপে অপটিক্যাল ক্যাবলের মধ্যে প্রেরণ করা হয়েছে। সে গুলোকে রিসিভার এন্ড গ্রহণ করার পরে Binary Value তে বদলে দেওযা হবে। এতে করে আপনার কম্পিউটার ডাটা গুলোকে বুঝতে পারে ও আপনাকে তথ্য প্রদান করে থাকে।
অপটিক্যাল ফাইবার যোগাযোগ ব্যবস্থা
অপটিক্যাল ফাইবার টেলিযোগাযোগ বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে কারণ এটিকে সহজে বাকানো যায় ও সাধারণ তারের মত ব্যবহার করা যায়।যদিও অপটিক্যাল ফাইবার স্বচ্ছ কাচ বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হতে পারে তবে দূরবর্তী যোগাযোগের জন্য সবসময় কাচের অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহৃত হয়, কারণ এতে তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ কম হয়।
মাল্টি-মোড ও সিঙ্গল-মোড দুই ধরনের তন্তুই ব্যবহৃত হয়। তবে মাল্টি-মোড স্বল্প দূরত্বের (৫০০ মিটার) জন্য ও সিঙ্গল-মোড দীর্ঘ দূরত্বের লিঙ্ক (links) এর জন্য উপযোগী। যেহেতু সিঙ্গল-মোডে সূক্ষ্ম পরিমাপের প্রয়োজন বেশি সেহেতু সিঙ্গল-মোড ট্রান্সমিটার, রিসিভার, অ্যাম্পলিফায়ার ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের দাম সাধারণত বেশি।
সাধারণত অবলোহিত রশ্মি অপটিক্যাল ফাইবার যোগাযোগে ব্যবহৃত হয়। তন্তুর শোষন (fiber absorption) ১৫৫০ ন্যানোমিটার আলোর জন্য সবচেয়ে কম এবং বিচ্যুতি (dispersion)১৩১০ ন্যানোমিটারে সবচেয়ে কম, ফলে এগুলোই তথ্য পরিবহনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
৮৫০ ন্যানোমিটারে একটি লোকাল মিনিমাম পাওয়া যায়, যে তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের জন্য কম খরচে ট্রান্সমিটার ও রিসিভার বানানো যায়। ফলে এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রায়শ স্বল্প দূরত্বের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অপটিক্যাল ফাইবার সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় ব্যবহৃত হয়, যার প্রতিটি বিপরীত দিকে তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহৃত হয়।
যেহেতু কাচের প্রতিসরণাঙ্ক প্রায় ১.৫, ফাইবারে আলোর গতিবেগ প্রায় ২০০,০০০ কিমি/সেকেন্ড, বা শুন্যে আলোর গতির দুই তৃতীয়াংশ।
আধুনিক কাচের অপটিক্যাল ফাইবারের বেলায় সর্বোচ্চ দূরত্ব আলোর বিচ্যুতির (dispersion) কারণে সীমাবদ্ধ। অপটিক্যাল ফাইবারের এই বিচ্যুতি (Dispersion) বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
যোগাযোগব্যবস্থায় অপটিক্যাল ফাইবার নাকি ইলেকট্রিক্যাল (বা তামা) তার কোনটি ব্যবহার করা হবে তা কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেসব ক্ষেত্রে উচ্চ ব্যান্ডউইডথ দরকার বা অধিক দূরত্বে তথ্য প্রেরণ করতে হলে সাধারণত অপটিক্যাল ফাইবার পছন্দনীয়।
এর প্রধান সুবিধা হচ্ছে এতে তথ্যের ক্ষতি খুব কম হয়, ফলে অধিক দূরত্বে অ্যাম্পলিফায়ার বা রিপিটার ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। এবং এর ডাটা-পরিবহন ক্ষমতা এতই বেশি যে এই ক্ষমতা পেতে হাজার হাজার ইলেকট্রিক্যাল লিঙ্ক লাগবে কেবল একটি অপটিক্যাল ফাইবারকে প্রতিস্থাপন করতে।
ফাইবার তামার তুলনায় অনেক হালকা: ৭০০ কিমি টেলিযোগাযোগ তামার কেবলের ওজন ২০ টন। এই একই কেবল যদি ফাইবার দিয়ে বানানো হয় তাহলে লাগে কেবল ৭ কেজি কাঁচ।
আরও সুবিধা হচ্ছে একাধিক ফাইবার পাশাপাশি অনেক দুরত্ব অতিক্রম করলেও ক্রসটক হয় না, যা কিনা কোন কোন ইলেকট্রিক কেবলের একটি সমস্যা।
স্বল্প দূরত্বে ও অল্প ব্যান্ডউইডথের ব্যবস্থায় তড়িৎ যোগাযোগ ব্যবহৃত হয়, কারণঃ
- উপাদানের খরচ কম
- ট্রান্সমিটার ও রিসিভার এর খরচ কম
- Splicing সহজ
- তড়িৎ শক্তি ও সংকেত একই সাথে পাঠানোর ক্ষমতা
- তড়িৎ যোগাযোগের এই সুবিধার কারণে সাধারণত স্বল্প দুরত্বের ব্যবস্থায় অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহৃত হয় না, তবে গবেষণাগারে এসব প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে।
কোন কোন ক্ষেত্রে স্বল্প দূরত্বে অথবা কম ব্যান্ডউইডথরে কোন ব্যবস্থায়ও অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহৃত হতে পারে, কারণঃ
তড়িৎ-চুম্বকীয় বাধা (ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফেরেন্স), আণবিক তেজস্ক্রিয়তা প্রতিরোধে অপটিক্যাল ফাইবার কার্যকর।
- উচ্চ বৈদ্যুতিক রোধ, যার কারণে উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির মাঝেও ব্যবহার করা যায়।
- হালকা ওজন, যা বিশেষ করে আকাশযানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
- কোন স্পার্ক হয় না, ফলে দাহ্য বস্তুর সাথেও ব্যবহার করা যায়।
- কোন তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরন হয় না, এবং সঙ্কেত না নষ্ট করে ট্যাপ করা কঠিন, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অতি গুরুত্বপূর্ণ।
- তারের আকার ছোট।
- ITU-T G.651, “৫০/১২৫ µm মাল্টিমোড গ্রেডেড ইনডেক্স অপটিক্যাল ফাইবার কেবলের ধর্মাবলী”
- ITU-T G.652, “সিঙ্গেল মোড অপটিক্যাল ফাইবার কেবলের ধর্মাবলী”
- ১০ গিগাবিট ইথারনেট
- FDDI
- ফাইবার চ্যানেল
- গিগাবিট ইথারনেট
- HIPPI
- SDH
- SONET
অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল এর প্রকারভেদ :
অপটিক্যাল ফাইবারের প্রকার গুলো বিভিন্ন আলাদা আলাদা বিষয় নির্ভর করে। যেমন-
- ব্যবহার হওয়ার পদ্ধতি।
- প্রতিসরাঙ্ক পদ্ধতি।
- আলোর প্রচারের পদ্ধতি।
তো চলুন এখন আলাদা আলাদা বিষয় গুলোর উপর নির্ভর করে অপটিক্যাল ফাইবারের প্রকার গুলো জেনে নেওয়া যাক।
প্রতিসরাঙ্ক এর উপর নির্ভর করে অপটিক্যাল ফাইবার এর প্রকার।
Step Index Fibers – এটি Cladding দ্বারা ঘিরে থাকা গঠন যেখানে Reflection এর Single Uniform Index আছে।
Graded Index Fibers – এখানে অপটিক্যঅল ফাইবার এর Refractive Index হ্রাস পেয়ে থঅকে যে ভাবে ফাইবার এক্সিস এর রেডিকাল দূলত্ব বাড়তে থাকে।
Materials এর উপর ভিত্তি করে
Plastic Optical Fibers – আলোর সংক্রমণ এর উদ্দেশ্যে এখানে polymethylmetha crylate নামে transparent thermoplastic টিকে core material হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
Glass Fibers – আলোর সংক্রমন এর উদ্দেশ্য এখানে উচ্চ মানের গ্লাস ফাইবার ব্যবহার করা হয়।
অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের লাভ ও সুবিধা গুলো
উক্ত প্রযু্ক্তিগত আধুনিক ক্যাবলের লাভ ও সুবিধার কথা বললে অনেক কথা বলা যায়। কিন্তু আমি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধার গুলোর সংক্ষিপ্ত রুপ দেওয়া হলো যেমন-
- Fast & instant.
- Power of light.
- Very small & flexible.
- Security.
- Low power loss.
- Electric shot circuit.
শেষ কথাঃ
আজ আপনি এই পোস্ট থেকে জানতে পারলেন অপটিক্যাল ফাইবার কি? অপটিক্যাল ফাইবার কিভাবে কাজ করে এই সম্পর্কে। আপনি যদি এই বিষয়ে পড়ে আপনার ভালো লাগে তাহলে একটি কমেন্ট করে জানাবেন। এই পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের জানাতে একটি শেয়ার করবেন ।
আরো পড়ুন: