আইফোন কেন এত দামি ? বিস্তারিত দেখুন
আইফোন কেন এত দামি ?
প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই মানুষ ব্র্যান্ড ভ্যালুকেই প্রাধান্য দেয়। আপনি যদি এক লিটার তেল কিনতে যান তবে নিশ্চয়ই একটি নন ব্র্যান্ড তেলকে প্রাধান্য দেবেন না যদি আপনার আয় যথেষ্ট হয়। যেমন আপনি জানেন একটা উচ্চ মূল্যের জন্য আপনি যদি ব্র্যান্ডের কোন জিনিস কিনতে যান তবে তার কোয়ালিটি সম্পর্কে আপনার একটি সম্যক ধারণা থাকে, কিন্তু নন-ব্র্যান্ড জিনিস কিনতে গেলে তার কোয়ালিটি ভালোও হতে পারে আবার খারাপ হতে পারে। তাই যথেষ্ট আয়কারী ব্যক্তিরা তার ব্যবহার্য জিনিসের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড ভ্যালুকে সবসময় প্রাধান্য দেন।
আইফোন কি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ?
i-Phone অ্যাপল সবসময় তার রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্টে বেশি টাকা খরচ করে। যেমন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যুক্ত ফেস আনলক এপল সবার আগে এনেছে। যদিও পরবর্তী সময়ে পদ্ধতিটি কমন হয়ে যাওয়ার পরে অনেকেই একে কম দামি ডিভাইস গুলোতেও ইন্টিগ্রেট করেছেন। কিন্তু সবার আগে সর্বাধুনিক ফিচার গুলো ব্যবহার করার সুযোগ-সুবিধেগুলো অ্যাপল ব্যবহারকারীরাই পান।
আমাদের প্রচলিত সমাজে সামাজিক মর্যাদার সূচক হিসেবেই বেশিরভাগ মানুষ দামি বস্তু ব্যবহারকে একটি উপাংশ হিসেবে দেখেন। কারণ একটি দামি ডিভাইস চাইলেই যে কেউ ব্যাবহার করতে পারেন না। এবং দামি ডিভাইস ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের সাথে সাধারণ মানুষের মধ্যে আমরা সবসময় বিভাজন রেখা কল্পনা করতে পছন্দ করি। এই দিক থেকে সাধারণ মানুষজন এপল ব্যবহারকারীদের সমীহের দৃষ্টিতে দেখেন। যেমন ৯০ এর দশকে একটি সিবি রেডিও এর মালিককে অনেকেই সমীহ করেই চলতেন । এখানে ব্যাপারটি যত না প্রযুক্তি গত তার চেয়ে বেশি মনস্ত্বাত্তিক ।
২০১৬ সালে যখন অ্যাপেল ৭ (আইফোনের ভার্সন) মার্কেটে আসে তার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬৪৯ মার্কিন ডলার। তার তিন বছর পর যখন অ্যাপেল ফ্লাগসিপ মার্কেটে আসে তার দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে ৫৪%।
ব্র্যান্ড আউটলুক
প্রথমত অ্যাপল ব্র্যান্ড এর পণ্য যে অনেক দামি হয়ে থাকে, এটা বর্তমানে সর্বজনস্বীকৃত একটি তথ্য বলা চলে। অ্যাপল যদি কোনো নতুন প্রোডাক্ট বাজারে ছাড়ে, এটি আগে থেকেই অনুমান করা যায় যে ঐ প্রোডাক্টের দাম আর দশটা প্রতিযোগী পণ্যের তুলনায় একটু বেশিই হবে।
অ্যাপল এর এমন প্রাইসিং স্কিম এর জন্য অ্যাপল একটি প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ অ্যাপল এমন একটি ব্র্যান্ড হয়ে গিয়েছে যা শুধুমাত্র যারা সামর্থ্য রাখেন, তাদের জন্যই প্রোডাক্ট বাজারে আনে। তাই বাজেট বিবেচনায় জনসাধারণের জন্য কম দামে প্রোডাক্ট লঞ্চ করা কোম্পানির প্রিমিয়ামনেস ট্যাগকে হালকা করতে পারে।
আইফোন কেন এত দামি ?
আইফোন এর দাম সাধারণত অনেক বেশি থেকেই শুরু হয়। অ্যাপল এর লেটেস্ট মডেল এর আইফোন, আইফোন ১৩ এর সবচেয়ে কম দামি ভ্যারিয়েন্ট, আইফোন ১৩ মিনি এর বেস মডেল দাম পড়ে প্রায় ৭০০ মার্কিন ডলার। এইতো গেলো সবচেয়ে কমদামি লেটেস্ট আইফোন মডেলের কথা। আইফোন এর অন্যান্য মডেলগুলোর দামও ফোন হিসাবে যে কাউকে অবাক করে দিতে বাধ্য।
চলুন জানার চেষ্টা করি আইফোন এর এত দামের পেছনের রহস্য ও আইফোন আসলেই এতো দামি হওয়ার যোগ্যতা আদৌ রাখে কিনা।
হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার
আইফোন এর হার্ডওয়্যার এর দিকে নজর দিলে এটি খুব সহজেই দৃশ্যমান যে অ্যাপল হার্ডওয়্যার এর ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়না। মোবাইল ব্যবহারে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে সেরা সব প্রযুক্তি আইফোনগুলোতে জুড়ে দেয় অ্যাপল। অর্থাৎ আইফোন এর হার্ডওয়্যার এর ক্ষেত্রে এক চুল ও ছাড় দিতে রাজি নয় অ্যাপল, তাতে ফোন এর দাম বাড়াতে হলেও।
অ্যাপল এর আইফোনের হার্ডওয়্যার হয়ত অ্যাপল নিজে তৈরি করে নয়তো অন্য ম্যানুফ্যাকচার থেকে অর্ডার করে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে সাপ্লাই করে। আর আইফোনের অপারেটিং সিস্টেম, আইওএস ও অ্যাপলের ডেভলপ করা।
সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার, দুইটিই নিজেদের তরফ থেকে আসায় আইফোনের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স হয়ে থাকে অনন্য ও অসাধারণ। আর এই জিরো কমপ্রোমাইজ যুক্ত হার্ডওয়্যার আর ইউজার-ফ্রেন্ডলি সফটওয়্যার এর মেলবন্ধনের প্রভাব দেখা যায় আইফোনের দামে।
অ্যাপল বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে আইফোনে সেরা ও যুগোপযগী প্রযুক্তির উপস্থিত নিশ্চিত করে। অ্যাপল কখনো তাড়াহুড়োর মধ্যে ফোন রিলিজ করে না। গ্রাহকদের সেরা ইউজার এক্সপেরিয়েন্স প্রদানের জন্য একটি ফোনের প্রতিটি বৈশিষ্ট্য অসংখ্যবার পরীক্ষা করা হয়। যে কোম্পানি তাদের ফোনকে নিখুঁত করার পেছনে এতো সময় আর অর্থ ব্যয় করে, তাদের ফোনের দাম বেশি হওয়া স্বাভাবিক নয় কি?
অসাধারণ ডিজাইন
আইফোনের ডিজাইনের ফ্যান নয়, এমন মানুষ হয়ত খুঁজে পাওয়াই যাবেনা। অ্যাপল তাদের আইফোনকে এমনভাবে ডিজাইন করে, যাতে যে কারো হাতে একটি আইফোন থাকলে, তার পাশের মানুষজন খুব সহজেই বুঝতে পারে যে এটি একটি আইফোন।
শুধু নজরকাড়া বাহিরের চাকচিক্যতাই নয়, বরং সফটওয়্যারেও পলিশড একটি এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করে আইফোন। প্রযুক্তিপ্রিয় হোক কিংবা সাধারণ, যেকোনো স্তরের মানুষের কাছে অ্যাপল এর এমন ডিজাইন ল্যাংগুয়েজ মুগ্ধতার প্রতীক বলা চলে। ডিজাইনও অন্যতম কারণ যে আইফোন কেন এত দামি।
আইফোন নিরাপত্তা কেমন?
বরাবরই নিজেদের প্রোডাক্টগুলোতে নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে অ্যাপল। আইফোন এর ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম থাকছেনা। এমনকি ব্যবহারকারীর নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে গিয়ে বিভিন্ন ফিচার বা কার্যক্রম গ্রহণ করে মাঝেমধ্যেই খবরে নাম দেখা যায় অ্যাপলের।
আইফোন হ্যাক করা বা অনুমতি ছাড়া আইফোনের ডাটা বের করা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব। এছাড়াও চুরি যাওয়া আইফোন জেলব্রেক করা বা জেলব্রেক করে ব্যবহার, যেকোনো এক্সপার্ট এর কাছেও দুঃস্বপ্নের সমতুল্য বলা চলে।
এছাড়াও আইফোন হারিয়ে গেলে Find My অ্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই হারানো আইফোনের লোকেশন খুঁজে বের করা যায়। এছাড়াও গড়পড়তা ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার এর ঝুঁকি আইফোনে তুলনামূলকভাবে খুব কম।
ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তাকে অ্যাপল এতোটাই গুরুত্ব দেয় যে এমনকি এফবিআই এর অনুরোধে পর্যন্ত ব্যবহারকারীর ফোন এর ডাটা পেতে ব্যাকডোর তৈরি করেনি অ্যাপল। ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিতে আইফোনে বিভিন্ন প্রযুক্তি যুক্ত করার পাশাপাশি গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগে অ্যাপলের প্রতিবছর অনেক টাকা গুণতে হয়। আর এর প্রভাব পড়ে আইফোন এর দামে।
বিক্রয়োত্তর সেবা
অ্যাপল এর ব্রিকয়োত্তর সেবার সামনে অন্যসব প্রতিষ্ঠানের সেবা তুচ্ছ মনে হতে পারে। ২০১৫ সালে বের হওয়া আইফোন ৭ এখনো নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট পায়। শুনতে অবাক করা হলেও এটাই সত্য। অনেক বছর ধরে আপডেট পাওয়ায় পুরোন মডেলের ফোনগুলোও নতুন নতুন সব ফিচারের ছোঁয়া পেয়ে নতুনের মতোই কাজ করে।
এছাড়াও আইফোনসহ যেকোনো অ্যাপল ডিভাইস কেনার বছরের পর বছর হয়ে গেলেও অ্যাপল সার্ভিস সেন্টার থেকে খুব সহজেই বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়া যায়। যার ফলে আইফোনে সমস্যা দেখা দিলেও সেই চিন্তার কাজ অ্যাপল সার্ভিস সেন্টারই করে। ব্যবহারকারীর কাজ হচ্ছে শুধুমাত্র ফোন সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যাওয়া। আর অ্যাপল সার্ভিস সেন্টারে গ্রাহকদের প্রতি দেখানো আন্তরিকতার কথা সবার মুখে মুখে।
আইফোন কেন এত জনপ্রিয় ?
এমন না যে আইফোন এর এই দাম শুধুমাত্র আমাদের দেশেই বেশি। উন্নত দেশগুলোর বিচারেও ৭০০ ডলার কিংবা এর চেয়ে বেশি মূল্যের ফোন কেনাটা যেকোনো দেশের নাগরিকের কাছেই একটি ছোটোখাটো বিলাসিতার মতোই। কিন্তু এই ধারণাকে মানুষের মাথা থেকে দূর করে আইফোনের দামকে মানুষের কাছে যথার্থ প্রমাণ করতে সফল হয়েছে অ্যাপল।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এতো দাম হওয়ার পরেও মানুষ আইফোন কিনছেই বা কেনো? চলুন খোঁজার চেষ্টা করি সেসব কারণ যার ফলে দামি হওয়া স্বত্বেও আইফোন এতো জনপ্রিয়।
আইফোনের জনপ্রিয়তা
আইফোনের অত্যাধিক জনপ্রিয়তার পেছনে এর জনপ্রিয়তাও অনেক বড় একটি ভুমিকা পালন করে। কমবেশি সকল সেলিব্রিটিকে আইফোন ব্যবহার করতে দেখা যায়। মানুষ জন্মগতভাবে কল্পনাপ্রিয় বলে পছন্দের ব্যাক্তিত্বের ব্যবহৃত ফোন অতি দামে কিনতেও দ্বিধাবোধ করেন না অনেকেই।
অনেকের কাছে ব্যাপারটা এখন এমন হয়ে গিয়েছে যে হাতের স্মার্টফোনটি আইফোন না হলেই নয়। বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ব্যবহার করায় আইফোন একটি বিলাসিতা ও প্রিমিয়ামনেস এর প্রতীক হয়ে গিয়েছে। তাই আইফোনের ব্যবহারকারীর চেয়ে এর জনপ্রিয়তাই অধিক বলা চলে।
আইফোন দামি হলেও দিনদিন এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আইফোন এর দাম এত বেশি হওয়ার পেছনের কারণ তো আমরা জানলাম। তাহলে এখন জানলেন আইফোন কেন এত দামী। আইফোন এর দাম আর জনপ্রিয়তা নিয়ে আপনার মতামত কী? আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনে।