রাউটার কি ? রাউটার কত প্রকার এবং এর কাজ কি ?
রাউটার কি ? রাউটার কত প্রকার এবং এর কাজ কি ? (বিস্তারিত জেনেনিন)
আমাদের এই পোস্টে আপনাকে জানাব রাউটার কি? রাউটার কত প্রকর এবং রাউটার এর কাজ কি। এছাড়া রাউটার সম্পর্কে আরো বিস্তারিত অনেক তথ্য জানিয়ে দেব।
আপনি যদি রাউটার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। তাহলে আমাদের দেওয়া আর্টিকেল শেষ পর্যন্ত মনযোগ দিয়ে পড়ুন।
বর্তমান সময়ে যারা কম্পিউটার বা স্মার্ট মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তারা সকলেই কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা সকলেই কোন না কোন কাজ করে থাকি যেমন- ইমেইল, বিদ্যুৎ বিল, অনলাইন শপিং, অনলাইন আয় ইত্যাদি।
আজ প্রতিটি সেক্টরে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার অফিসিয়াল কাজ গুলো করা হয়। সত্যি বলতে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে আমরা আমাদের কাজ গুলো সহজ ভাবে সম্পন্ন করতে পারি।
এছাড়া বর্তমান সময়ে লোকেরা অফিসিয়াল অনেক কাজ নিজের ঘরে বসে সম্পন্ন করতে পারে ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
এমনিতে ইন্টারনেট বর্তমানে সকলেই ব্যবহার করছে এবং ইন্টারনেট এর সাথে জরিত অনেক বিষয় গুলো নিয়েও আমরা সকলেই কিছু না কিছু জানি।
তবে এখনও অনেক লোক আছে যারা নতুন করে, ইন্টারনেটের ব্যবহার করছেন। তাই তাদের জন্য ইন্টারনেট এর সাথে জরিত একটি অনেক জরুরী বিষয় হচ্ছে রাউটার। তাই রাউটার নিয়ে এখানে কিছু তথ্য শেয়ার করব।
রাউটার কী ?
রাউটার একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র, যা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে তৈরি। এটি নেটওয়ার্ক তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। রাউটার হচ্ছে একটি নেটওয়ার্কিং ডিভাইস যা বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে ডাটা প্যাকেট তার গন্তব্যে কোন পথে যাবে তা নির্ধারণ করে। ডেটা প্যাকেট হচ্ছে ডেটার ব্লক বা ডেটার সমষ্টি।
রাউটার ডেটা প্যাকেটগুলোকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম দূরত্বের পাথ(path) ব্যবহার করে। রাউটার ইন্টারনেটে “ট্রাফিক ডিরেক্টিং” এর কাজ সম্পন্ন করে। সাধারণভাবে, একাধিক নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত আন্তঃ নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে একটি ডাটা প্যাকেটকে এক রাউটার থেকে অন্য রাউটারে পাঠানো হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি গন্তব্য নোডে পৌঁছে।
রাউটারের সংজ্ঞা জেনে নিন ।
রাউটার হল একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ডিভাইস, যা নেটওয়ার্কে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ডাটা পাঠানোর কাজ করে। এই প্রক্রিয়াটিকে রাউটিং বলা হয়। অর্থাৎ রাউটার দুই বা ততোধিক নেটওয়ার্ক কানেক্ট করার কাজ করে।
রাউটার OSI মডেলের তৃতীয় স্তরে কাজ করে এবং এটি কম্পিউটারের IP ঠিকানার (IP Address) উপর ভিত্তি করে। এটি দুই বা ততোধিক নেটওয়ার্কের মধ্যে যোগাযোগ করতে ICMP এর মতো প্রোটোকল ব্যবহার করে। এটি একটি বুদ্ধিমান সরঞ্জাম (Inteligent Device) হিসাবেও পরিচিত কারণ, এটি উৎস থেকে গন্তব্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেটওয়ার্ক প্যাকেটগুলি পাস করার সর্বোত্তম রুট রাস্তা গণনা বা নির্ধারণ করতে পারে।
রাউটার হল একটি মাইক্রো হার্ডওয়্যার নেটওয়ার্কিং ডিভাইস যা ডাটাকে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বহন করার কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা প্রতিদিন ইন্টারনেটে ইমেল , ওয়েব পৃষ্ঠা ইত্যাদি পরিষেবাগুলি ব্যবহার করি ৷
ইনটারনেটে এই পরিশেবাগুলি ডাটাসমুহে লুকানো বা এনক্রিপ্ট (encrypt) অবস্থায় পাঠানো হয়। রাউটার দ্বারা সেই ডাটা প্যাকেট পাওয়ার পর, সেই প্যাকেটে থাকা তথ্য পড়ে কাঙ্খিত নেটওয়ার্ক ঠিকানায় ডাটাটি প্রেরণ করে। এইভাবে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একটি রাউটার থেকে অন্য রাউটারে একটি প্যাকেট পাস করে তথ্য পৌঁছে দেওয়া হয়।
সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম রাউটার মূলত একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস যা অনেকগুলি নেটওয়াক ডিভাইসকে একত্রে যুক্ত করে এবং নেটওয়ার্কে ডাটা প্যাকেট পাঠানো এবং রিসিভ করার কাজ করে থাকে।
রাউটারের ইতিহাস (History Of Router)
প্রথম রাউটারটি 1974 সালে তৈরি করা হয়েছিল, তবে রাউটারের ধারণাটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং গবেষণার একটি গ্রুপ থেকে এসেছিল যেটি ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্কিং ওয়ার্কিং গ্রুপ নামে একটি সংস্থা ছিল।
রাউটার তৈরির জন্য 1972 সালে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর ইনফরমেশন প্রসেসিং নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। 1970-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে 1980-এর দশক পর্যন্ত, মিনি কম্পিউটারগুলি রাউটার হিসাবে ব্যবহৃত হত।
আজকের সময়ে, আধুনিক হাই স্পিড রাউটারগুলি দ্রুত ডেটা প্যাকেট ফরওয়ার্ড করার জন্য এনক্রিপশনের মতো সুরক্ষা ব্যবহার করে।
রাউটার কত প্রকার ও কি কি ?
একটি রাউটারের অনেক ধরনের প্রকার আছে। কারণ বর্তমান সময়ে অনেক আলদা আলাদা রাউটার রয়েছে।
কিন্তু আমি নিচের অংশে আপনাকে কিছু জনপ্রিয় রাউটারের প্রকার গুলো বলব। যেমন-
- Broadband routers (Wired routers)
- Wireless routers (Wi-fi routers)
- Core routers
- Edge routers
- Inter provider border routers
Broadband routers (Wired routers)
Broadband routers (Wired routers) এই ধরণের রাউটার গুলো দুটি বা তার থেকে অধিক কম্পিউটার গুলোতে যুক্ত করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
এরকম Broadband রাউটার গুলোর মাধ্যমে অনেক হাই স্পেড ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব। রাউটার গুলা একটি Wired Connection এর মাধ্যমে মডেম থেকে ইন্টারনেট সার্ভিস গ্রহণ করে।
এবং তারপরে আপনার ঘরে বা অফিসে থাকা অন্যান্য ডিভাইস গুলোকে সেই ইন্টারনেট কানেকশনের সাথে যুক্ত হওয়ার পথ করে দেয়।
Wireless Routers
বর্তমানে wireless router এর ব্যবহারের অনেক চাহিদা রয়েছে। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বা অফিসিয়াল কাজে আমাদের বাসা দপ্তরে বেশির ভাগ সময় wireless router গুলো বেশি ব্যবহার হয়।
উক্ত wireless router রাউটার গুলোর মাধ্যমে একটি কম্পিউটার কোন তার ছাড়াই অন্য একটি কম্পিউটার যুক্ত করে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
তার জন্য এই রাউটারকে বলা হয় wireless router তার ছাড়া। এই সকল রাউটার গুলো একটি wireless সিগনালের নির্ধারিত এরিয়া তৈরি করে থাকে।
যে নির্ধারিত এরিয়ার ভেতরে থাকে wireless সিগনাল এর সাথে একটি কম্পিউটার, মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি ডিভাইসে যুক্ত করে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
Core Router
Core router এর মাধ্যমে বিভিন্ন আলাদা আলাদা জায়গা থেকে রাউটার গুলো এক সাথে যুক্ত করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
মনে করুন- আপনার কোম্পানিতে ৫ টি রাউটার আলাদা আলাদা জায়গায় আছে। এখন সেই ৫ টি আলাদা আলাদা রাউটার গুলো একসাথে পরস্পরে যুক্ত করার কাজ করে এই Core router.
Edge Routers
Edge Routers রাউটার গুলোকে ইন্টানেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা ISP এর পাশে রাখা হয়। বাহিরের প্রটোকল যেমন- Border Gateway Protocal গুলোকে অন্যান্য ISO এর BGP এর সাথে কনফিগার করে।
Inter Provider Border Routers
আপনারা ISP সম্পর্কে অবশ্যই জানেন। আইএসপি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার। যেমন- Airtel, Reliance, BSNL ইত্যাদি। যে গুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের মোবাইল কিংবা পিসিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি।
এই সকল আইএসপি গুলোকে পরস্পর সংযুক্ত করার জন্য এই Inter provider border routers ব্যবহার করা হয়।
আপনি যদি উক্ত আলোচন সঠিক ভাবে অনুসরণ করে থাকেন। তাহলে রাউটার কি, রাউটার কত প্রকার, রাউটার এর কাজ কি এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারছেন।
রাউটার এর কাজ কি ?
মোট কথা- রাউটার এর কাজ হলো- আপনি যদি কম্পিউটার বা মোবাইলের মাধ্যমে ওয়াইফাই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চান। তাহলে আপনাকে অবশ্যই রাউটার ব্যবহার করতে হবে।
রাউটার ব্যবহার করার ফলে আপনার ইন্টারনেট সংযুক্ত পাওয়া যায়। আর আপনার ওয়াফাই ব্যবহারের জন্য রাউটার ছাড়া কোন ভাবেই ইন্টারনেট সংযুক কাজ করবে না। তাই রাউটার দ্বারা ইন্টারনেট কানেকশন যুক্ত করা হয়।
রাউটারের প্রধান কাজ কি?
একটি রাউটার বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে। তো চলুন এবার জেনে নেই রাউটারের কাজগুলো কি কি।
- LAN কে সম্প্রচার করা থেকে বাধা দেয়।
- এটি ডিফল্ট গেটওয়ের মতো কাজ করে।
- প্রোটোকল অনুবাদে সাহায্য করে
- নেটওয়ার্কের মাঝখানে একটি রুট তৈরি করতে কাজ করে।
- প্রেরক থেকে প্রাপকের কাছে ডেটা সরবরাহ করতে কাজ করে
- দুটি নেটওয়ার্ক সংযোগ করতে কাজ করে।
- লুপ মুক্ত পথ তৈরি করতে থাকে।
- প্যাকেটটি গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সংক্ষিপ্ততম পথ খুঁজে বের করে।
রাউটারের বৈশিষ্ট্য (Router features)
রাউটার হল লেয়ার 3 বা নেটওয়ার্ক লেয়ার ডিভাইস।
- এটি বিভিন্ন নেটওয়ার্ককে একসাথে সংযুক্ত করে এবং এক নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্কে ডেটা প্যাকেট পাঠায়।
- রাউটারটি ল্যান (লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক) এবং WAN (ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক) উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যেতে পারে।
- এটি আইপি প্যাকেট আকারে ডেটা স্থানান্তর করে। ডেটা প্রেরণ করতে, এটি আইপি প্যাকেটের পথে সংজ্ঞায়িত IP ঠিকানা ব্যবহার করে।
- রাউটারে একটি রাউটিং টেবিল রয়েছে যা নেটওয়ার্কের পরিবর্তন অনুসারে সময়ে সময়ে রিফ্রেশ হয়।
- ডেটা প্যাকেট প্রেরণের জন্য, এটি টেবিলের সাথে পরামর্শ করে এবং রাউটিং প্রোটোকল রাউটিং প্রোটোকল ব্যবহার করে।
- রাউটিং টেবিল প্রস্তুত বা রিফ্রেশ করতে রাউটার একে অপরের মধ্যে তথ্য ভাগ করে।
- রাউটারগুলি ব্রডকাস্ট ঝড়ের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।
- রাউটারগুলি অন্যান্য নেটওয়ার্কিং ডিভাইস যেমন হাব, ব্রিজ এবং সুইচের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল।
শেষ কথা,,,
আপনি অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন যে রাউটার কি এবং বিভিন্ন ধরণের রাউটারগুলি কী কী, রাউটার কিভাবে কাজ করে। আশা করি আমাদের এই লেখাটি আপনাদের অবশ্যই ভালো লেগেছে।
এই লেখাটি সম্পর্কে যদি আপনি আমদের কোন পরামর্শ দিতে চান, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন যা আমাদের জন্য খুবই উপকারী।
আরো পড়ুন: