
কম্পিউটার কী ? কম্পিউটার আবিষ্কার করেন কে ? জেনে নিন বিস্তারিত
কম্পিউটার কী ? আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের নিত্যদিনের কাজের সঙ্গী কম্পিউটার। ই-মেইল পাঠানো থেকে শুরু করে ইন্টারনেট ব্রাউজিং, গেমস খেলা, মুভি দেখাসহ পড়ালেখা শেখা কিংবা অফিসের কতো কাজই না করা হয় এই যন্ত্রটির সাহায্যে।
কম্পিউটার কী কম্পিউটার আবিষ্কার করেন কে ? – এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেই জানলেও, “কম্পিউটার কত প্রকার?” – তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। তাই এই ব্লগের আদ্যোপান্ত জুড়েই আলোচনা করবো কম্পিউটার নিয়ে। কম্পিউটার কী ? – দিয়ে শুরু করে আলোচনা এগিয়ে যাবে কম্পিউটার কী কী কাজে ব্যবহার হয় তা নিয়ে। আর এছাড়াও সব শেষে থাকছে, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি ও কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কত প্রকার? এই প্রশ্নগুলোর বিস্তারিত উত্তর কম্পিউটার কী।
কম্পিউটার কী তাহলে চলুন শুরুতেই জেনে নেই, কম্পিউটার কি বা কম্পিউটার কাকে বলে?
কম্পিউটার কি? / কম্পিউটার কাকে বলে?

কম্পিউটার কী শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ ‘Computare’ (কম্পিউটেয়ার) থেকে। আবার অনেক বিজ্ঞানীর মতে, শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘Compute’ (কম্পিউট) থেকে এসেছে। বাংলায় এই শব্দ দুটির অর্থ হিসাব বা গণনা করা। আর কম্পিউটার (Computer) শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো গণনাকারী বা হিসাবকারী যন্ত্র।
সহজভাষায়, কম্পিউটার (Computer) হলো একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যা খুব দ্রুত ও নির্ভুলভাবে বিভিন্ন ধরনের গাণিতিক ও যৌগিক সমাধান করতে পারে। কম্পিউটার কী শুরুর দিকে প্রাচীন গণনাকারী যন্ত্র হিসেবে আবিষ্কার করা হলেও, বর্তমানের আধুনিক কম্পিউটারগুলো দিয়ে গণনা ছাড়াও, বিভিন্ন রকমের আলাদা আলাদা কাজ করা যায়।
কম্পিউটার আবিষ্কার করেন কে?
খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালে যন্ত্রের সাহায্যে গণনার যাত্রা শুরু হলেও, কম্পিউটার তৈরির প্রথম ধারণা দেন বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজ। ১৮৮২ সালে তিনিই প্রথম মেকানিক্যাল কম্পিউটার (Mechanical Computer) তৈরি করেছিলেন। তার তৈরি নকশার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে আধুনিক কম্পিউটার (Computer) তৈরি করা হয়। তাই চার্লস ব্যাবেজকে কম্পিউটারের জনক বলা হয়।

কম্পিউটার কী ১৮৮২ সালে বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজ প্রথম কম্পিউটার আবিষ্কার করেন, তবে প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো তৈরি শুরু হয় ১৯৪২ থেকে ১৯৬৬ এর মধ্যে। তবে সেই যন্ত্রগুলো এতোটাই বড়ো ছিলো যে, সেগুলো রাখতে বিশাল এক কক্ষের প্রয়োজন হতো। পৃথিবীর সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ ইলেক্ট্রনিক কম্পিউটার নির্মাণ করা হয় ১৯৪৩ সালে, যার নাম ছিলো ENIAC (Electronic Numerical Integrator And Computer).
কম্পিউটার কী কী কাজে ব্যবহার হয় লিখা শুরু করলে, হয়তো শেষ হবে না। যদিও এই যন্ত্রটির ব্যবহার শুরু হয় মূলত হিসাব বা গণনা যন্ত্র হিসেবে, জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধান করার জন্য। তবে বর্তমানে এমন কোনো কাজ নেই যাতে কম্পিউটারের ব্যবহার নেই।
তাই চলুন এবার জেনে নেই কম্পিউটার কী কী কাজে ব্যবহার হয়, যেগুলো না জানলেই নয় –
শিক্ষাক্ষেত্রে
কম্পিউটার কী শিক্ষাক্ষেত্রে Computer কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা হয়তো কোভিট-১৯ মহামারীর সময় সবাই উপলব্ধি করেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ব্যবহার রয়েছে। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশন তৈরি থেকে শুরু করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন, এই সবগুলো কাজ এই যন্ত্রটির সাহায্য ছাড়া এখন কল্পনা করাও সম্ভব নয়।
চিকিৎসাক্ষেত্রে
চিকিৎসাক্ষেত্রে যে কোনো রোগ নির্ণয়ে বর্তমানে ব্যবহার করা হয় কম্পিউটারাইজড ডায়াগনোস্টিক সিস্টেম। ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাফ, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান থেকে শুরু করে অপারেশন ছাড়া পিত্তথলির পাথর অপসারণের জন্য ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি, চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়ের সব কাজে এই যন্ত্রটির প্রয়োজন হয়।
গবেষণায়
আধুনিক সময়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা যে কোনো গবেষণার কাজে অপরিহার্য মাধ্যম কম্পিউটার। কারণ এটি দিয়ে গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ, তথ্য সংরক্ষণ এবং জটিল গণনাকে অতি দ্রুত করা যায় খুব সহজেই। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ও তথ্য সঞ্চয় করে রাখতে কম্পিউটার অবদান অনেক।
চিত্তবিনোদনের ক্ষেত্রে
বিনোদনের ক্ষেত্রে কম্পিউটারে ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। ভিডিও গেমস খেলা, মুভি দেখাসহ কিংবা অ্যানিমেশন ও স্পেশাল এফেক্ট তৈরির কাজ এই যন্ত্রটি ছাড়া করা যায় না কম্পিউটার কী।
কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?
গঠন ও বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে, কম্পিউটার তিন প্রকার:
১) এনালগ কম্পিউটার (Analog Computer)
২) ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer)
৩) হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid Computer)
১) এনালগ কম্পিউটার (Analog Computer)
কম্পিউটার কী ভৌতো পরিমাপ, গ্যাসীয় বা তরল পর্দার্থের পরিমাপ, বৈদ্যুতিক তারের ভোল্টেজ, বায়ু প্রবাহ ও চাপ পরিবর্তিত হওয়া ইত্যাদি অ্যানালগ ডেটা প্রক্রিয়া করার জন্য যে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় তাকে এনালগ কম্পিউটার বলে।
Analog Computer -এর বৈশিষ্ট্য
- এটি একের বেশি চিপ দিয়ে তৈরি;
- এরা কম ফ্লেক্সিবেল ও ধীর গতির হয়ে থাকে;
- ভৌত পরিমানে ডেটা সঞ্চয় করে;
- পরিমাপের সাহায্যে গণনার কাজ সম্পাদন করে;
- ভৌত পরিমাণ, বৈদ্যুতিক তারের ভোল্টেজের উঠানামা, পাইপের ভেতরে গ্যাসীয় বা তরল পদার্থের চাপের তারতম্য ইত্যাদি পরিমাপ করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
২) ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer)
কম্পিউটার কী সহজভাষায় বললে, যে কম্পিউটার বাইনারি সিস্টেম (0 ও 1) ব্যবহার করে গনণার কাজ করে তাকে ডিজিটাল কম্পিউটার বলে। ডিজিটাল কম্পিউটারে দ্রুত গতিতে গণনা এবং যৌক্তিক ক্রিয়াকলাপের কাজ করা যায়। উচ্চ গতির ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করার জন্য এই ধরণের যন্ত্রগুলো মেমোরি সম্পন্ন ডিস্ক এবং ইনপুট ও আউটপুট ইউনিট দিয়ে ডিজাইন করা হয়। ডেক্সটপ, মোবাইল, ল্যাপটপ এবং স্মার্ট ফোন এই সবকিছু ডিজিটাল কম্পিউটারের উদাহরণ কম্পিউটার কী।
Digital Computer -এর বৈশিষ্ট্য
- বাইনারি পদ্ধতিতে ০ ও ১ নিয়ে কাজ সম্পন্ন করে;
- এটি সব ধরনের ডাটা বাইনারি ০ ও ১ এর মাধ্যমে ইনপুট হিসেবে গ্রহণ করে;
- এতে তিনটি অংশ থাকে: ইনপুট, প্রসেসিং ও আউটপুট;
- সংখ্যা প্রক্রিয়াকরণের ভিত্তিতে কাজ করে;
- কাজের সুক্ষ্ণতা অত্যন্ত বেশি (১০০ %)
- কাজে ফলাফল সরাসরি মনিটরে প্রদর্শিত হয় বা অন্য কোনো আউটপুট ডিভাইসে প্রকাশিত হয়।
৩) হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid Computer)
এনালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটারের সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যগুলিকে একত্রিত করে যে যন্ত্র তৈরি হয়, তাকে হাইব্রিড কম্পিউটার বলে। সাধারণত এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায়ও ব্যবহার করা হয়। কম্পিউটার কী হাইব্রিড কম্পিউটারে অ্যানালগ ও ডিজিটাল উভয়ের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি একদিকে যেমন অ্যানালগেরর মতো দ্রুত, আবার অন্যদিকে ডিজিটালের মতো নির্ভুলতার সাথে কাজ করতে পারে। আরো সহজ ভাবে বললে, হাইব্রিড কম্পিউটার এনালগ এবং ডিজিটাল কম্পিউটারের একটি আংশিক সংমিশ্রণ।
ডিজিটাল কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?
কম্পিউটার কী আকার-আয়তন ও ব্যহারের ভিত্তিতে ডিজিটাল কম্পিউটার ৪ প্রকার। যথা:-
১) সুপার কম্পিউটার (Super Computer)
২) মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer)
৩) মিনি কম্পিউটার (Mini Computer)
৪) মাইক্রো কম্পিউটার (Micro Computer)
মাইক্রো কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?
Micro Computer আবার দুই প্রকার
১) ডেস্কটপ (Desktop)
২) ল্যাপটপ (Laptop)
ডেস্কটপ (Desktop)
ডেস্কটপ হলো এক ধরনের ব্যক্তিগত Computer, যা দৈনন্দিন কাজে সাধারণত ডেস্ক বা টেবিলে রেখে ব্যবহার করা যায়। শুধু ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যই নয়, অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ব্যবহার করা হয়।
ল্যাপটপ (Laptop)
ল্যাপটপ হলো বহনযোগ্য ব্যক্তিগত Computer, যা বইয়ের মতো ভাঁজ করে রাখা যায়। কর্মক্ষেত্রে, পড়াশোনা ও ব্যক্তিগত বিনোদনসহ বিভিন্ন কাজে ল্যাপটপ ব্যবহার করা হয়।