ফেসবুক মেটাভার্স নিয়ে ৫টি জনপ্রিয় প্রশ্নের উত্তর | Answers to 5 popular questions about Facebook Metavers

Deal Score0
Deal Score0

meta - facebook new company name

 বর্তমান প্রযুক্তি বিশ্বে “মেটাভার্স” শব্দটি অন্যতম বহুল আলোচিত বিষয়। এটি এতোটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে যে ইন্টারনেটের বহুল পরিচিত প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক এই ফিউচারিস্টিক আইডিয়ার উপর ভিত্তি করে নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে রিব্র‍্যান্ড করেছে।

সম্প্রতি ফেসবুক তাদের কোম্পানির নাম ফেসবুক থেকে মেটা প্ল্যাটফর্মস এ পরিবর্তন করে। সংক্ষেপে এখন থেকে ফেসবুক এর কর্পোরেট নাম হবে মেটা। ১৯৯২ সালে “স্নো ক্রাশ” উপন্যাসে মেটাভার্স শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন নিল স্টিফেনসন।

ফেসবুক এর সিইও মার্ক জাকারবার্গ ও তার টিম হলেন প্রযুক্তি স্বপ্নদ্রষ্টা যারা কিনা মেটাভার্স নিয়ে কাজ করা ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছেন। মেটাভার্স কিভাবে কাজ করে, মেটাভার্সে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে ইতিমধ্যে মার্ক ও তার টিম বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছেন।

তবে অনেকেই সংশয়ে আছেন এই নিয়ে যে ফেসবুক কি এই উপায়ে মানুষের ব্যাক্তিগত তথ্য অধিক হারে গ্রহণ করবে? এছাড়াও অসত্য তথ্যের মত সমস্যা আরো গুরুতর হয়ে উঠতে পারে মেটাভার্স এর কারণে। মেটাভার্স নিয়ে জনমনে রয়েছে নানান প্রশ্ন। চলুন জেনে নিই এরকম গুরুত্বপূর্ণ ৫টি প্রশ্নের উত্তর।

মেটাভার্স কি?

মেটাভার্সকে ইন্টারনেট দুনিয়ার ত্রিমাত্রিক (৩ডি) ভার্সন বলা চলে। জাকারবার্গ এটিকে এমন একটি “ভার্চুয়াল পরিবেশ” হিসেবে ব্যাখ্যা করেন যেখানে আপনি শুধুমাত্র স্ক্রিনে দেখা নয়, বরং স্বয়ং নিজে প্রবেশও করতে পারবেন।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট, অগমেন্টেড রিয়েলিটি গ্লাস, স্মার্টফোন অ্যাপ ও অন্যান্য ডিভাইস ব্যবহার করে ইন্টারকানেক্টেডভার্চুয়াল কমিনিউটিতে দেখা করা, কাজ করা বা খেলাধুলা করার মত বিষয় সম্ভব হবে মেটাভার্স এর মাধ্যমে। পাশাপাশি অনলাইন লাইফের অন্যান্য উপাদানসমুহ, যেমনঃ শপিং, সোশ্যাল মিডিয়া, ইত্যাদি যুক্ত হবে মেটাভার্সে। 

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ভিক্টোরিয়া পেট্রক বলেন, “এটি হতে যাচ্ছে কানেকটিভিটির পরবর্তী বিপ্লব, যেখানে সকল উপাদানসমুহ একত্র হয়ে বাস্তব ইউনিভার্সের মত একটি আলাদা ইউনিভার্স তৈরি করবে, যাতে বাস্তব জীবনের মত ভার্চুয়াল লাইফ কাটানো সম্ভব হবে।”

মেটাভার্সে কি করা যাবে?

ভার্চুয়াল কনসার্টে যাওয়া, অনলাইনে বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ বা ডিজিটাল পোশাক পড়ে দেখা বা কেনার ক্ষেত্রে মেটাভার্স আমুল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এছাড়াও করোনা মহামারীর কারণে সৃষ্ট ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে মেটাভার্স। সহকর্মীদের ভিডিও গ্রিডে দেখার বদলে ভার্চুয়ালি সামনাসামনি দেখা সম্ভব হবে মেটাভার্সের মাধ্যমে।

সম্প্রতি কোম্পানিসমূহের ব্যবহারের জন্য মিটিং সফটওয়্যার, হরাইজন ওয়ার্করুমস আনে ফেসবুক। ৩০০ডলার বা তার অধিক মূল্যের অকুলাস ভিআর হেডসেট ব্যবহার করে ব্যবহার করা যাবে এই মিটিং সফটওয়্যার। এখনো এই প্রযুক্তি পরীক্ষাধীন থাকলেও ব্যাপকভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার সময়ের ব্যাপার মাত্র।

প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করে মেটাভার্সে প্রবেশ করা যাবে। মুলত বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি করা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করা যাবে এভাটার এর মাধ্যমে। “একস্থান থেকে অন্য স্থানে টেলিপোর্ট এর মত ব্যাপার খুব সহজ হতে যাচ্ছে,” জানান জাকারবার্গ।

ভিআর বা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট, যা পরে মেটাভার্সে প্রবেশ করা যাবে।
ভিআর বা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট, যা পরে মেটাভার্সে প্রবেশ করা যাবে।

তবে এক কোম্পানির ভার্চুয়াল জগতের সাথে অন্য কোম্পানির ভার্চুয়াল জগতের আন্তঃযোগাযোগ এর উপায় এখনো প্রযুক্তি কোম্পানিসমূহের আবিস্কার করা বাকি রয়েছে। একাধিক মেটাভার্স একসাথে যুক্ত করার ফলে একটি সংযুক্ত মেটাভার্স প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে, যা বাস্তব বিশ্বের পাশাপাশি একটি আলাদা বিশ্বে পরিণত হবে।

ফেসবুক কি সম্পূর্ণরুপে মেটাভার্সে পরিণত হবে?

জাকারবার্গ মনে করেন ইন্টারনেট এর পরবর্তী জেনারেশনের অংশ হতে যাচ্ছে এই মেটাভার্স যা ডিজিটাল ইকোনমিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। আসন্ন সময়ে ফেসবুককে সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি নয়, বরং মেটাভার্স কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান বলে জানান মার্ক জাকারবার্গ।

অবশ্য ভয়ের কিছু নেই, কারণ বর্তমানে আপনি যেভাবে মোবাইল অ্যাপ ও ব্রাউজারে ফেসবুক ব্যবহার করছেন ভবিষ্যতেও এই ব্যবস্থা থাকবে। মূল ফেসবুককে জটিল না করে ভার্চুয়াল জগতের জন্য আলাদা একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্যই মূলত মেটাভার্সকে ফেসবুকের বাইরে নিজস্ব পরিচয়ে পরিচিত করেছেন জাকারবার্গ। হয়ত আপনি মেটাভার্সে আপনার ফেসবুক আইডি দিয়ে বাড়তি সুবিধা নিতে পারবেন। কিন্তু আপনি চাইলে মেটাভার্স এড়িয়েই ফেসবুকের মূল ফিচারগুলো ব্যবহার করতে পারবেন।

মেটাভার্স কি শুধুমাত্র ফেসবুক এর প্রজেক্ট?

ফেসবুক বা মেটা এর সিইও, মার্ক জাকারবার্গ নিজেই স্বীকার করেন যে তারা মেটাভার্স তৈরির একমাত্র প্রতিষ্ঠান নন। ইতিমধ্যে মাইক্রোসফট ও চিপমেকার কোম্পানি এনভিডিয়া নিজেদের ভার্চুয়াল জগত তৈরিতে কাজ করছে।

এনভিডিয়া’র অমনিভার্স প্ল্যাটফর্ম এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, রিচার্ড কেরিস বলেন, “ইন্টারনেটে একই ব্যাপারে যেমন একাধিক প্রতিষ্ঠান কাজ করে, একইভাবে একাধিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড ও এনভায়রনমেন্ট তৈরিতে কাজ করবে।”

মেটাভার্স একটি মুক্ত প্রযুক্তি হওয়া প্রয়োজনীয়, যার মাধ্যমে একাধিক প্রতিষ্ঠানের তৈরি একাধিক ওয়ার্ল্ডে টেলিপোর্ট করা যাবে বেশ সহজে। এটা অনেকটা এক ওয়েবসাইট থেকে অন্য ওয়েবসাইটে ঘুরাফেরা করার মতোই।

মেটাভার্স মিটিং
মেটাভার্স মিটিং

পাশাপাশি ভিডিও গেম কোম্পানিসমুহও কাজ করছে এই মাল্টিভার্সপ্রযুক্তি নিয়ে। জনপ্রিয় ভিডিও গেম, ফোর্টনাইট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, এপিক গেমস তাদের দীর্ঘমেয়াদী মেটাভার্স পরিকল্পনার মাধ্যমে ইতিমধ্যে ১বিলিয়ন ডলারের ফান্ড অর্জনে সক্ষম হয়েছে। গেম প্ল্যাটফর্ম রোবোলক্স মেটাভার্স নিয়ে তাদের সুদূরপ্রসারী চিন্তা সম্পর্কে জানায়। তাদের ভাষ্যমতে মেটাভার্স হবে এমন একটি জায়গা যেখানে “মানুষজন একসাথে এসে শেখা, কাজ করা, খেলা, ইত্যাদির ৩ডি অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন।

এছাড়াও কনজ্যুমার ব্র‍্যান্ডসমুহ এই ট্রেন্ডে অংশ নিচ্ছে। জুন মাসে ইটালিয়ান ফ্যাশন হাউস গুচি ও রোবোলক্স একসাথে হয়ে গেমের মধ্যে ডিজিটাল একসেসরিজ বিক্রি করে। এছাড়াও বেভারেজ কোম্পানি কোকা-কোলা ও বিউটি কোম্পানি ক্লিনিক তাদের ডিজিটাল টোকেন বিক্রি করে যা মাল্টিভার্সের দিকে ইংগিত করে।

ফেসবুক মেটাভার্স কতটা নিরাপদ?

বিগত ডাটা লিকের কথা বিবেচনা করলে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে যেকোনো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যাপারে সংশয় আসতেই পারে। একইভাবে ফেসবুক এর এই নতুন মেটাভার্স এর ক্ষেত্রেও নিরাপত্তাজনিত সংশয় থাকা অসম্ভব নয়।

কেমন হবে মেটাভার্স?

ফেসবুক এর মত প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম মেটাভার্স এর মাধ্যমে অনলাইন সংস্কৃতির স্বাধীনতা নিশ্চিতে কাজ করবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে অনেকে তাদের একাউন্ট, ছবি, পোস্ট, প্লেলিস্ট, ইত্যাদির মত ব্যক্তিগত তথ্যের মালিকানা ফেসবুকের কাছে চলে যাবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় আছেন।

কিন্ডারড ভেনচারস এর ম্যানেজিং পার্টনার স্টিভ জেং বলেন, “ইন্টারনেটে যেমন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে খুব সহজে যাওয়া যায়, একইভাবে ট্র‍্যাক বা মনিটর হওয়া ছাড়াই ইন্টারনেটে স্বাধীনভাবে বিচরণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।” হতে পারে ফেসবুক তাদের মেটাভার্সে ব্যক্তিগত তথ্য শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যবহার করবে। 

নিজেদের আয়ের তথ্য জানানোর সময় কিছুদিন আগে জাকারবার্গ জানান, “সোশ্যাল মিডিয়া হিসেবে যেভাবে বিজ্ঞাপন নিজেদের স্ট্রেটেজির অংশ ছিলো, একইভাবে মেটাভার্স এর ক্ষেত্রেও বিজ্ঞাপন গুরুত্বপূর্ণ একটি সংযোজন হতে চলেছে।

তবে ভার্চুয়াল বিশ্বে ব্যক্তিগত তথ্য ও তার অপব্যবহার এর কথা চিন্তা করলে মেটাভার্স নিয়ে বেশ সাবধানতা অবলম্বন করার দরকার রয়েছে। এসব ঝুঁকির সমাধান নিশ্চিত না করে মেটাভার্স ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব নয়।

ফেসবুক মেটাভার্স নিয়ে আপনি কী ভাবছেন? কমেন্টে সবার সাথে শেয়ার করতে পারেন!

cobangla
We will be happy to hear your thoughts

Leave a reply

Tech Topic Cobangla
Logo
Register New Account