ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন | নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যে ভুলগুলো এড়িয়ে চলা দরকার | Freelancing Guidelines | New Freelancer Guidelines

Deal Score0
Deal Score0

 ফ্রিল্যান্সিং এ ক্যারিয়ার তৈরির দারুণ সুযোগ এর কথা মাথায় রেখে দেশের অনেক তরুণ ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে ঝুঁকছে। তবে ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয়ের আশায় এই পথে আসলেও অনেকেই সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে এই প্রতিযোগিতাপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে ঠিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যে ভুলগুলো এড়িয়ে চলা দরকার সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

বিনামূল্যে কাজ করা

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার পোর্টফোলিও সাজানো একান্ত জরুরি। তবে তাই বলে যে কেউ চাইলেই ফ্রি কাজ করবেন না। বর্তমানে নিজের করা সেরা কাজগুলো বাছাই করে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করা তেমন কঠিন কোনো ব্যাপার নয়।

ওয়েবসাইট সম্পর্কে ধারণা বা জ্ঞান থাকলে আপনার করা কাজসমূহ পিডিএফ বা গুগল ডকস এ সাজিয়ে ক্লায়েন্টের সামনে তুলে ধরতে পারেন। যথাসম্ভব বিনামূল্যে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।

আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগা

অন্যজন আপনাকে কাজ দেওয়ার আগে আপনার নিজের উপর আত্মবিশ্বাস থাকা একান্ত জরুরি। ফ্রিল্যান্সিং এর কাজের ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা বা যোগ্যতাকে নিয়ে সংশয়ে থাকা উচিত নয়৷ এতে আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়।

যেহেতু আপনার কাজের জন্য কেউ আপনাকে অর্থ প্রদান রাজি হচ্ছে, তার মানে অবশ্যই আপনার শ্রমের মূল্য রয়েছে। আপনাকে অবশ্যই নিজেকে ও নিজের দক্ষতাকে মূল্যায়ন করতে হবে। এসবের উপর আত্মবিশ্বাস রেখে কাজ চালিয়ে যান।

অতি কম রেটে কাজ করা

ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে যাত্রা শুরুতে অনেকেই বিভিন্ন কঠিন কাজের জন্যও খুব কম রেট চার্জ করেন। এটা কিন্তু ঠিক নয়৷ আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে যে কাজ করছেন সে কাজের জন্য স্ট্যান্ডার্ড মিনিমাম চার্জ কত তা জেনে নিন ও এর চেয়ে কম রেটে কাজ করবেন না।

কোনো শ্রমসাধ্য কাজ কম টাকায় করার ফলে আপনি নিজের সময় ও শ্রম ও নষ্ট করবেন। সাথে অন্য ফ্রিল্যান্সারগণ আপনার এই বোকামির জন্য কম দামে কাজ করতে একই ক্লায়েন্টের কাছে হেনস্তার শিকার হবে। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনার কাজের জন্য অন্তত মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড ফি চার্জ করুন।

সবাইকে ফ্রি স্যাম্পল প্রদান

কোনো কোম্পানি বা ক্লায়েন্ট যদি আপনার কাজের ফ্রি স্যাম্পল চায়, তবে তাদের সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ নিন। এরকম ক্ষেত্রে কিছু ক্লায়েন্ট ফ্রি স্যাম্পল ব্যবহার করে তার কাজ সেরে নেয় ও একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি প্রতারণার শিকার হতে পারেন।

কোনো ক্লায়েন্ট যদি আপনার কাজের ফ্রি স্যাম্পল চায়, তাহলে প্রথমে ওই ক্লায়েন্টকে আপনার পোর্টফোলিও দেখান। কোনো বড় কোম্পানিও যদি ফ্রি স্যাম্পল চায়, তাহলেও আপনি সেটা দুইবার চিন্তা করে দেখুন।

খারাপ ক্লায়েন্ট চিনতে না পারা

বাস্তব জীবনের মতো ফ্রিল্যান্সিং এর যাত্রায় কয়েকজন খারাপ মানুষের সাথে দেখা হতেই পারে। প্রতিশ্রুতির চেয়ে বেশি কাজ দাবি করা, দেরিতে পেমেন্ট করা, যথাসময়ে যথাযথ রেসপন্স না করা, ইত্যাদি যদি হয় আপনার বর্তমান ক্লায়েন্টের অবস্থা তবে এই ধরনের ক্লায়েন্ট যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। এসব ক্লায়েন্টের সাথে সময় নষ্ট না করে সঠিক সুযোগের সন্ধান করুন।

নিজের উপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ

অনেকেই বেশি আয়ের চিন্তায় অতিরিক্ত কাজের বোঝা কাঁধে নিয়ে নিজের শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় রাখতে ভুলে যায়। তবে নিজেকে কাজের চাপে বন্দী করার আইডিয়াটি সুবিধার নয়।

আপনি যদি নিজের শারীরিক ক্ষমতার বাইরে অধিক কাজ করার চেষ্টা করেন, সেক্ষেত্রে আপনি ডেডলাইন মিস করবেন ও চাপে পড়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল করা শুরু করবেন। নিজের ক্ষমতার সীমা সম্পর্কে জানুন ও এক দিন, এক সপ্তাহ ও এক মাসে আপনি সর্বোচ্চ কতটুকু কাজ করতে সক্ষম, তার ধারণা রাখার চেষ্টা করুন।

যতটা সময় বিরতি নেওয়া প্রয়োজন, তা গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। ফ্রিল্যান্সিং মানেই প্রতিটা সেকেন্ড ব্যস্ততার মাঝে কাটানো নয়। চেষ্টা করুন স্মার্টভাবে কাজ করতে ও সুন্দরভাবে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করতে।

ডেডলাইন মিস করা

ডেডলাইন মিস করার ভুল সকল ফ্রিল্যান্সার এর এড়িয়ে চলা একান্ত জরুরি। কাজের চাপে নিজেকে কোণঠাসা করার চক্করে ডেডলাইন মিস করা কিন্তু বোকামি। নিতান্তই যদি আপনার অনিচ্ছাকৃত ভাবে ডেডলাইন মিস করার সম্ভাবনা থাকে, অবশ্যই তা আগে থেকেই ক্লায়েন্টকে জানান।

কন্ট্রাক্ট ছাড়া কাজ করা

কাজের ধরন বা মাত্রা যেমনই হোক না কেনো, ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে অবশ্যই কন্ট্রাক্ট ছাড়া কাজ করা এড়িয়ে চলুন। ফ্রিল্যান্সিং করতে গেলে কন্ট্রাক্ট ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

আপনার কন্ট্রাক্ট এ পেমেন্ট, ডেডলাইন, কাজ জমাদান সম্পর্কিত তথ্য ও ক্লায়েন্ট বা ফ্রিল্যান্সার সম্পর্ক সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য যোগ করুন। শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সার নয়, বরং ক্লায়েন্টও কন্ট্রাক্ট থেকে উপকৃত হয়।

রিভিউ না চাওয়া

কোনো কোনো ফ্রিল্যান্সার মনে করেন ক্লায়েন্ট এর কাছ থেকে রিভিউ চাওয়া একটি ভুল কাজ। তবে এই ধারণা সত্যি নয়। কাজ শেষে অবশ্যই ক্লায়েন্ট এর কাছ থেকে আপনার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে রিভিউ চাইবেন।

আপনার কাজ ও কাজের কোয়ালিটি নিয়ে আপনি আত্মবিশ্বাসী হলে এই প্রক্রিয়াটি আপনার জন্য তেমন একটা কঠিন হওয়ার কথা না। একই ভাবে আপনিও ক্লায়েন্টের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন।

এর ফলে ক্লায়েন্টের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপনের পাশাপাশি ক্লায়েন্টের তরফ থেকে পজিটিভ রিভিযউ বা রেটিং পেতে পারেন। আপনার কাজের উল্লেখ্যযোগ্য রেটিং বা রিভিউ প্রদর্শন করতে পারেন আপনার পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটে।

দীর্ঘ মেয়াদি ক্লায়েন্ট না খোঁজা

ফ্রিল্যান্সিং জগতে কাজের শেষ নেই, এই তথ্য যেমন ঠিক, তেমনি দীর্ঘমেয়াদি ক্লায়েন্ট এর সাথে কাজ করে অধিক সুবিধা পাওয়া যায় এই ব্যাপারটিও সত্য। প্রজেক্টে কাজ করে কম সময়ে দ্রুত আয় করা যায় এটা ঠিক।

তবে নিয়মিত আপনাকে নির্দিষ্ট ঘন্টা বা নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজের বিনিময়ে পেমেন্ট করবে, এমন দীর্ঘমেয়াদি ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া অধিক ভালো। এভাবে ক্লায়েন্টের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে আপনার সময় নিয়ন্ত্রণ করা তো সম্ভব হবেই, সাথে আপনার আর্থিক অবস্থা গতিশীল থাকবে।

নিজেকে যথাযথভাবে তুলে না ধরা

অনেক নতুন ফ্রিল্যান্সার তাদের কাছে ক্লায়েন্ট আসার অপেক্ষায় থাকেন। এভাবে কাজ পেতে ব্যাপক সময় ব্যয় হয়। এর চেয়ে আপনার কাজের সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে, এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে নিজ থেকে যোগাযোগ করে আপনার সেবা সম্পর্কে জানাতে পারেন। তৎক্ষণাৎ কাজ না পেলেও উক্ত প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে কোনো কাজ আপনাকে দিতে পারে।

আয়ের একাধিক পথ তৈরী না করা

ফ্রিল্যান্সার হওয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আর্থিক অস্থিতিশীলতা। তাই আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিং এর উপর ভরসা করে বসে না থেকে আয়ের একাধিক পথ খুঁজে পাওয়ার ব্যবস্থা করুন।

যেমনঃ আপনি যদি একজন কনটেন্ট রাইটার হন, সেক্ষেত্রে আপনার নিজের ওয়েবসাইটে নিজের জন্য লেখা প্রকাশ করতে পারেন। এছাড়াও যেকোনো ধরনের ফ্রিল্যন্সার চাইলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করতে পারে। ইউটিউব চ্যানেল খুলে সেখানে আপনার লেখাকে ভিডিও আংগিকে সাজাতে পারেন।

এই তো গেলো ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি আয়ের বাড়তি উপায় সম্পর্কে আলোচনা। এছাড়াও আপনি যা করেন, সে কাজে দক্ষ হলে ওয়েবিনার বা কোর্স এর মাধ্যমে আয় করতে পারেন।

মুলকথা হচ্ছে আর্থিক সচ্ছলতা বজায় রাখতে ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি এক বা একাধিক আয়ের মাধ্যম রাখার চেষ্টা করুন।

তো, কেমন লাগলো এই লেখাটি? আপনি কি একজন ফ্রিল্যান্সার? আপনার মতামত কমেন্টে জানান।

cobangla
We will be happy to hear your thoughts

Leave a reply

Tech Topic Cobangla
Logo
Register New Account