হার্ডডিস্ক কি ? কত প্রকার এবং কি কি ?
হার্ডডিস্ক কি ? হার্ডডিস্ক কিভাবে কাজ করে ?
আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রগতি বিশ্ব ব্যবস্থাকে বদলে দিয়েছে। যার কারণে পূর্বের দুঃসাধ্য কাজ গুলো এখন অতি সাধারণ। এমন হাজারো প্রযুক্তির সমন্বয় আমাদের জীবনযাত্রাকে করেছে উন্নত, আধুনিক ও অতি সহজ।
এটি বললে ভুল হবে না যে, আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র জুড়েই রয়েছে প্রযুক্তি। এসব প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনযাত্রার প্রতিটি কঠিন পদক্ষেপকে সহজ করে নিয়েছে। প্রযুক্তির আবিষ্কার এর মূল কারণই হলো সহজিকরণ। অসাধ্য কিংবা কঠিন কাজটি সহজে পরিণত করা। আর এ প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত আছে এবং ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
আজকের প্রযুক্তির এমন অগ্রগতির পেছনে রয়েছে হাজারো বাধা ও প্রতিবন্ধকতার গল্প। মানুষ যখনই কোনো বাধা বা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন তখনই তার সমাধানে প্রযুক্তি আবিষ্কার করার অক্লান্ত চেষ্টা করছে।
তার ফলস্বরূপ দুর্ভেদ্য ও কঠিন কাজ গুলো হয়েছে অতি সহজ। কিন্তু আজকের এত সহজ, উন্নত ও আধুনিক জীবনযাপন কিন্তু একদিনেই আসেনি। প্রযুক্তির ক্রমাগত পরিবর্তন ও ধারাবাহিকতার মাধ্যমে আমরা আজকের এই পর্যায়ে এসেছি।
মানুষের আধুনিক জয়যাত্রায় এমনই একটি বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তথ্যের সংরক্ষণ। প্রথমদিকে বিভিন্ন গাছের ডালে বা অন্যান্য মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ করা গেলেও তা ছিল অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এরপর মিশরীয়দের পাতার আবিষ্কার তথ্য সংরক্ষণ কে অনেক সহজ করলেও তবুও অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। তাই তথ্যকে সহজভাবে জমা রাখার প্রচেষ্টা মানুষ বহুদিন থেকেই করে আসছিল।
আপনারা প্রত্যেকেই জানেন কম্পিউটার বিভিন্ন রকম উপাদান নিয়ে তৈরি। ঠিক সেরকম একটি উপাদান হলো হার্ড ডিক্স। তোর ছোট্ট একটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা আপনাদেরকে বোঝায় আমাদের মোবাইল ফোনে এক্সট্রা ডেটা যেমন ফটো ভিডিও ইত্যাদি রাখার জন্য মেমোরি কার্ড ব্যবহার করি ঠিক তেমনি কম্পিউটারে ডেটা রাখার জন্য হার্ডডিস্ক ব্যবহার করে থাকি। তো hard disk কে ডিস্ক ড্রাইভ বা হার্ডডিস্ক ড্রাইভ (HDD) ও বলা হয় ।
হার্ড ডিস্ক হচ্ছে পাতলা গােলাকার ধাতব পাতের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্থায়ী এবং সেকেন্ডারি মেমোরি। ধাতব পাতের উভয়পৃষ্ঠে চুম্বকীয় পদার্থের প্রলেপ থাকে। এজন্য এ ডিস্ককে চুম্বকীয় ডিস্ক (Magnetic Disk) ও বলা হয়। ডিস্কের গােলাকার ধাতব পাতগুলাে দেখতে গ্রামাে-ফোন রেকর্ডের মতো। গোলাকার ধাতব পাতগুলাে একটির উপরে একটি স্তরে বসানাে থাকে।
পাতগুলাের পৃষ্ঠে অনেকগুলাে এককেন্দ্রিক বৃত্তে ডেটা সংরক্ষণ করা হয়। এসব বৃত্তকে ট্রাক (Track) বলা হয়। প্রতিটি বৃত্তকে কয়েকটি সমান ভাগে ভাগ করা হয়। এরূপ এক একটি ভাগকে সেক্টর (Sector) বলা হয়। প্রতিটি সেক্টরের ধারণক্ষমতা 512 বাইট। পাতগুলাের মাঝখানে আধাইঞ্চির মতাে ফাঁকা স্থান থাকে। এই ফাঁকা জায়গায় একটি দন্ড (Shaft) থাকে।
এই দন্ডের সাহায্যে পাতগুলাে একটির উপর আর একটি বসানাে থাকে এবং সেই দন্ডের সাহায্যে কাজের সময় পাতগুলাে প্রতি মিনিটে ৭২০০ বা আরও বেশি বার আবর্তিত হয়। হার্ডডিস্কের ধারণক্ষমতা নির্ণয় করা হয় সাধারণত গিগাবাইট, টেরাবাইট ইত্যাদি এককে।
সাধারণত বাজারে 20GB থেকে 500GB ধারণক্ষমতাসম্পন্ন হার্ডডিস্ক প্রচলিত আছে। 8TB ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন হার্ডডিস্ক এখন বাজারে পাওয়া যায়। Seagate, Toshiba বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় হার্ডডিস্ক ড্রাইভ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
হার্ডডিস্ক পার্সোনাল কম্পিউটারের জনপ্রিয় ও বেশি ব্যবহৃত স্টোরেজ ডিভাইস। হার্ডডিস্কে রাখা তথ্যসমূহ সহজে নষ্ট হয় না। এজন্য প্রয়ােজনীয় সকল প্যাকেজ এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ হার্ডডিস্কে রাখা হয়। হার্ডডিস্ক নষ্ট হওয়া বা মােছনীয় কোন কমান্ড ছাড়া এখানকার তথ্যসমূহ নষ্ট হয় না।
তবে ভাইরাসের আক্রমণে তথ্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ভাইরাস থেকে সতর্ক থাকলে হার্ডডিস্কের তথ্য হারাবার ভয় থাকে না। হার্ডডিস্ক অধিক ধারণক্ষম বিধায় এখানে অনেক তথ্য সংরক্ষণ করা যায়। হার্ডডিস্ক ব্যবহারের জন্যে আলাদা ড্রাইভের প্রয়ােজন হয় না।
ডিস্ক এবং ড্রাইভ একসাথেই সংযােজিত থাকে। এক্ষেত্রে একাধিক ডিস্ক একসঙ্গে পর পর রেখে লিখন ও পঠনের কার্যাবলি সম্পাদন করা হয়। কেসিং-এর মধ্যে কয়েকটি স্কু দ্বারা এটি স্থাপন করা হয় বিধায় ফ্লপিডিস্কের ন্যায় একে সহজে এক স্থান থেকে অন্য সরানো যায় না। ফ্লপিডিস্কের তুলনায় হার্ডডিস্ক অনেক দ্রুতগতিতে কাজ করে। হার্ডডিস্কের ধারণক্ষমতা নির্ণয় করা হয় মেগাবাইট, গিগাবাইট ইত্যাদি এককে।
হার্ডডিস্ক কিভাবে কাজ করে ?
আমরা উপরে জানলাম হার্ডডিস্ক এ কতগুলো চাকতি বা ডিস্ক থাকে এই চাকতি বা ডিস্কগুলোকে বলা হয় প্লাটার। এই ডিস্কগুলো ম্যাগনেটিক হয়। এ হার্ডডিক্সের প্লাটার গুলি মিনিটে চার হাজার বারের বেশি ঘুরতে ঘুরতে তথ্য সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে।
আমরা সবাই জানি কম্পিউটার 0 এবং 1 বাইনারি নাম্বারে কাজ করে। চৌম্বকীয় প্লেটের পৃষ্ঠ কোটি কোটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত। ক্ষুদ্র অঞ্চলের চুম্বকীয়করণ স্বাধীনভাবে সঞ্চালিত হতে পারে। প্লেটের চুম্বকীয় ক্ষুদ্র অংশটি একটি বাইনারি উচ্চকে নির্দেশ করে এবং টিত বাইনারি মান একের সমতুল্য।
এটি নির্দেশ করে যে হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (hard disk drive) দ্বারা সংরক্ষিত অক্ষর, সংখ্যা এবং ডেটার অন্যান্য রূপগুলি বাইনারি মানগুলির সংমিশ্রণ, যেমন, শূন্য বা এক। Hard disk দ্বারা সংরক্ষিত তথ্যের ক্ষুদ্রতম অংশ বিট নামে পরিচিত।
পদার্থের চুম্বকীয়করণের প্রক্রিয়াটি সাধারণত ডিস্কে তথ্য সংরক্ষণ করে কারণ এটির পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ হয়ে গেলে কোন ক্ষতি হয় না। দীর্ঘ সময়ের জন্য পাওয়ার সাপ্লাইয়ের সাথে সংযুক্ত না থাকলেও ড্রাইভ থাকা ডেটা ধরে রাখা হয় অর্থাৎ ডেটা গুলি মুছে যায় না। আশা করি হার্ডডিস্ক কিভাবে কাজ করে এ বিষয়টি বুঝতে পারলেন।
হার্ডডিস্ক কত প্রকার ও কি কি?
হার্ডডিস্ক কে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা হয় সেগুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
২. SATA হার্ড ডিস্ক
৩. SCSI হার্ড ডিস্ক
৪. SAS হার্ড ডিস্ক
1. PATA হার্ড ডিস্ক : এর পুরো নাম হল Serial Advanced Technology Attachment । SATA ইন্টারফেস কম গতিতে বড় ডেটা ভলিউম পরিচালনা করে। এর দামও তুলনামূলকভাবে অনেক কম এবং এর কার্যকরতা অনেক ভালো। বর্তমানে এই হার্ডডিস্কগুলো অনেক কম্পিউটার এবং সার্ভার হার্ডওয়ারে ব্যবহার করা হয়। SATA ইন্টারফেসের Speed 6Gb/sec থেকে 600Mb/sec পর্যন্ত হয়।
2. PATA HARD DISK : এর পুরো নাম হল Parallel Advanced Technology Attachment। এই pata ড্রাইভ গুলি অনেক আগে ব্যবহার করা হতো এগুলো অনেক পুরনো বর্তমানে এই ধরনের ড্রাইভ আর ব্যবহার করা হয় না। 1986 সালে প্রথম PATA ড্রাইভ ব্যবহার করা হয়েছিল। PATA ড্রাইভ 133 MB/s স্পীডে পর্যন্ত ডেটা স্থানান্তর হার প্রদান করতে পারে।
3. SCSI HARD DISK : SCSI এর মানে হলো small computer system interface । এই ড্রাইভ গুলি ছোট কম্পিউটার সিস্টেম ইন্টারফেস এ ব্যবহার করা হয় যেমন প্রিন্টার, স্ক্যানার ইত্যাদি। এর ট্রান্সফার স্পিড হলো ৭০০MB/s ।
4. SSD Hard Disk : এটির পুরো নাম হলো সলিড-স্টেট ড্রাইভ (solid state drive) । এই ধরনের হার্ড ড্রাইভ গুলি বর্তমানে সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হয়। SSD হলো ডেটা সঞ্চয় করার জন্য নন ভোলাটাইল মেমরি।
হার্ডডিস্ক (Hard Disk) এর বৈশিষ্ট্য
হার্ডডিস্ক কম্পিউটারের সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে যার ফলে নষ্ট হয় কম।
- এটার ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি।
- এটা একটি দ্রুত গতিসম্পন্ন স্টোরেজ ডিভাইস।
- এটা অনেক টেকসই এবং মজবুত।
- হার্ড ডিস্ক সাধারণত কম্পিউটারের মধ্যে থাকে।
- এর মধ্যে দীর্ঘদিন ডাটা গুলো জমা রাখা যায়।
- সামান্য তাপ ও আর্দ্রতায় হার্ড ডিস্ক নষ্ট হয় না।
- এটার এক্সেস টাইম ফ্লাপি ডিস্কের চেয়ে অনেক কম।
- এটার ডাটা সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে ফ্লপি ডিস্কের তুলনায় অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য।
হার্ডডিস্ক এর অসুবিধা
- এটা নষ্ট হলে সহজে ঠিক করা যায় না।
- কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক বা ল্যাপটপের হার্ডডিস্ক এর দাম অনেক বেশি।
- এটাকে ফ্লপি ডিস্কের মতো যখন তখন ড্রইভ থেকে খোলা সম্বভ হয় না।
শেষ কথা,,
বন্ধুরা আজকে আমরা জানলাম হার্ডডিস্ক কি এবং কম্পিউটার হার্ডডিস্ক কত প্রকার, কিভাবে কাজ করে? আশাকরি আমার লেখা হার্ডডিস্ক ড্রাইভ (HDD) কি সেটা সহজে বুঝতে পারবেন। ভালো লাগলে শেয়ার করবেন ।
আরো পড়ুন: