আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি ? What is artificial intelligence in bangla
বর্তমান প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তো এটি বর্তমান যুগের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার।
তো আমরা অনেক আগে থেকে কিন্তু কম্পিউটার ব্যবহার করে আসছি এবং তার সাহায্যে বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ কার্য করে চলেছি, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কম্পিউটার কি নিজে থেকে কোন কাজ করতে পারে, এর উত্তর হল না। কম্পিউটার মানব মস্তিষ্কের থেকে হাজারগতিতে ডাটা প্রসেস করতে পারলেও নিজে থেকে কোন কাজ করতে পারেন না। আমাদের দ্বারা ইনপুট বা কমান্ড পেলেই তবে তারা আউটপুট দিতে সক্ষম বা কাজ করতে সক্ষম হয়।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি
তো বিজ্ঞানীরা অনবরত চেষ্টা করে চলেছে আমাদের মস্তিষ্কের মত যেন কম্পিউটার কাজ করতে পারে। এর জন্য বিজ্ঞানীরা এমন এমন প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার ডিজাইন করেছে, যেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই নিজে থেকে কাজ করতে পারে বা আমাদের মতন ডিসিশন নিতে পারে একে এক কথায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলে।
তো artificial intelligence নিয়ে অনেকের মনে ভুল ধারণা আছে, তো আপনি যদি এই আর্টিকেলটি ধৈর্য ধরে সম্পূর্ণ পড়েন তাহলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি | কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বৈশিষ্ট্য | কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিভাবে কাজ করে | আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর খারাপ দিক কি ইত্যাদি বিষয়।
চলুন তাহলে বেশি কথা না বলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি (artificial intelligence) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাকে বলে এ বিষয়টি জেনে নিই।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি | What is artificial intelligence in bengali
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা হল একটি প্রযুক্তি যা মেশিন দ্বারা তৈরি করা হয়, এবং এটি মানুষের মতো চিন্তাভাবনা করে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কে machine intelligence ও বলা হয়। এই প্রযুক্তি মানুষের মতো করে চিন্তা করা এবং কাজ করার ক্ষমতা তৈরি করে যেমন কখন কি সিদ্ধান্ত নেওয়া, কোন কিছু মনে রাখা, বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা ইত্যাদি।
এটি সম্পূর্ণরূপে কম্পিউটিং সিস্টেমের উপর নির্ভরশীল। Artificial intelligence (AI) এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো যন্ত্রপাতি তৈরি করে মানব স্বাস্থ্য থেকে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে পারে।
বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স খুব জনপ্রিয় একটি বিষয়, যেটি টেকনোলজি এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। অনেক কোম্পানি AI বা মেশিন লার্নিং এ যথেষ্ট বিনিয়োগ করে চলেছে যেমন, Tesla, Google map, Siri, Nest ইত্যাদি কোম্পানি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাকে বলে ?
যে মেশিন বা যন্ত্র মানুষের মত চিন্তা করে কাজ করতে পারে এবং মানুষের মনের সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্য গুলি সেখানে লক্ষ্য করা যায় তাকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে । এটি মানুষের সাহায্য ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের মতো করে কাজ করতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিভাবে কাজ করে
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তিনটি পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে ।
১. Machine learning
মেশিন লার্নিং বলতে বুঝায় কম্পিউটার নিজে থেকে কিছু শিখে অর্থাৎ ইন্সট্রাকশন থেকে শিখে, মেশিন কে ইনপুট হিসেবে কিছু ইন্সট্রাকশন বা ডেটা দেয় হয়, তা থেকে কম্পিউটার সম্ভাব্য উত্তর পেয়ে যায়।
২. Neural Network
সোজা বাংলা এটি হলো হ্যাঁ অথবা না। উদাহরণস্বরূপ আপনি কম্পিউটারকে মেশিন লার্নিং এ কয়েকটি পাখির ছবিতে এক পাখি ছাড়া অন্য ছবিতে শূন্য উত্তর দেওয়া সেখালেন ফলে AI নিউরাল নেটওয়ার্ক প্রত্যেকটি ছবিকে বিশ্লেষণ করে আপনার দেখানো ছবিকে আগের প্যাটার্ন গুলোকে মিলিয়ে যদি পাখি হয় তাহলে এক উত্তর পাবেন, যদি পাখি না হয় তাহলে শুন্য উত্তর পাবেন।
৩. Deep learning
AI এর তৃতীয় পাঠ হলো Deep learning , এটা ঠিক মেশিন লার্নিং এর মতই , Deep learning ইউজার অর্থাৎ গ্রাহকদের ডেটা বিশ্লেষণ করে সঠিক পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে।
তো এই তিনটি পদ্ধতিতে মূলত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট কাজ করে থাকে ।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনেক ধরণ রয়েছে, তার মধ্যে প্রধান চারটি ধরন হল
১. Reactive machines
২. Limited memory
৩. Theory of mind
৪. Self-awareness
তো এই প্রত্যেকটি ভাগ নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. Reactive machines
প্রতিক্রিয়াশীল মেশিনগুলি হল এমন এক ধরনের AI সিস্টেম যেগুলির কোনও মেমরি নেই এবং কাজ নির্দিষ্ট, যার অর্থ হলো একটি ইনপুট সর্বদা একই আউটপুট এ সরবরাহ করে। মেশিন লার্নিং মডেলগুলি রিঅ্যাকটিভ মেশিন হতে থাকে কারণ তারা ক্রয় বা সার্চের ইতিহাসের মতো গ্রাহকের ডেটা নেয় এবং একই গ্রাহকদের কাছে সুপারিশ সরবরাহ করতে এটি ব্যবহার করে।
২. Limited memory
সীমিত মেমরি তত্ত্বাবধানে থাকা AI সিস্টেমের সমন্বয়ে গঠিত যা পরীক্ষামূলক ভাবে ডেটা বা বাস্তব জীবনের ঘটনা থেকে জ্ঞান লাভ করে। প্রতিক্রিয়াশীল মেশিনের ঠিক বিপরীত এটি, সীমিত মেমরি অতীত থেকে শেখে এবং ডেটা পর্যবেক্ষণ ভালো ফিট মডেল তৈরি করে।
৩. Theory of mind
এটির অর্থ হলো চিন্তা, অনুভূতি, আবেগ যা তাদের আচরণ কে প্রভাবিত করে। মনের তত্ত্ব” এক ধরনের artificial ইন্টেলিজেন্স যা মানুষের স্বভাবকে বোঝাতে পারে এবং মানুষ বোঝানোর মতো কথাও বলতে পারে ।
৪. Self-awareness
Self-awareness বা স্ব-সচেতন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর চূড়ান্ত প্রকার যেখানে মেশিনগুলি নিজেদের সম্পর্কে সচেতন এবং তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা এবং অন্যদের আবেগ, আচরণ এবং বুদ্ধিমত্তা উপলব্ধি করে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার
বর্তমানে artificial intelligence দ্বারা নানান রকমের কাজ করা হয়ে থাকে যেমন
১. বর্তমানে বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানি যেমন অ্যাপেলের siri, গুগলের Google assistant, আমাজন এর elexa ইত্যাদি কোম্পানী আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি ব্যবহার করছে যাতে আমাদের জীবনযাত্রার মান কে আরো সহজতরো করার জন্য।
২. দিকনির্দেশনা থেকে শুরু করে, অটো পাইলট, বিমান চালানো শেখার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয়।
৩. আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ভ্রমণ বিষয়ক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, যেমন আমাদের স্মার্টফোন ব্যবহার করে google ম্যাপের মাধ্যমে গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে পারি।
৪. ইউটিউব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে আপনার পছন্দের ভিডিও নিচে বা পাশে সাজেস্ট করে। মনে করেন আপনি ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখছেন, সেই ভিডিও রিলেটেড আরো অনেক ভিডিও ইউটিউব আপনাকে নিচ্ছি বা পাশে সাজেস্ট করবেন, আর এই কাজটি করা হয় আর্টিফিশিয়াল-ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে
৫. বর্তমানে অনেক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ বা ওয়েবসাইট artificial intelligence ব্যবহার করছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা
চলুন তাহলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সুবিধা গুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করি।
১. আর্টিফিশিয়াল-ইন্টেলিজেন্স কম সময়ের ত্রুটি বিহীনভাবে ভালো ফলাফল প্রদান করে।
২. AI ডেটা সংগ্রহ এবং এন্ট্রি, ইমেল প্রতিক্রিয়া, চ্যাটবটের মাধ্যমে গ্রাহক সহায়তা,সফ্টওয়্যার পরীক্ষা, ইত্যাদি ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে অটোমেশন করা সক্ষম হয়।
৩. এটি দ্রুত ডেটা ক্যাপচার করতে পারে এবং বিশ্লেষণের জন্য প্রাসঙ্গিক ডেটা বের করতে পারে।
৪. elexa এবং siri, voice assistant হল ইত্যাদি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সিয়াল উদাহরণ যা ভয়েস কমান্ডগুলিতে সাড়া দেয় এবং ব্যবহারকারীদের প্রশ্ন এবং ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনা কাজে সহায়তা করে।
৫. চিকিৎসা ক্ষেত্রে Artificial intelligence গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যেমন বিভিন্ন ধরনের সার্জারি, অপারেশন এর ক্ষেত্রে ইত্যাদি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অসুবিধা
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সুবিধা যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে যেমন
১. বিভিন্ন ধরনের কাজে অটোমেশন সিস্টেম ব্যবহার করার ফলে মানুষের মধ্যে অলসতা বাড়াতে পারে।
২. Artificial intelligence সেটআপ করার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। অর্থাৎ AI সিস্টেম বাস্তবায়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ এ বেশ ব্যয়বহুল করে তোলে।
৩. AI সিস্টেমগুলি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখতে প্রশিক্ষণ এর প্রয়জন পড়ে ।
৪. জয় সকল ক্ষেত্রে AI ব্যবহার করলে মানুষের কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়তে পারে।