বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটারগুলো দেখে নিন
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটারগুলো দেখে নিন
বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী কম্পিউটারগুলোকে সুপার কম্পিউটার বলা হয়। কম্পিউটার নিয়ে কিছুটা ধারণা রাখলে সুপার কম্পিউটার শব্দটি আগেও শুনে থাকবেন।
তবে এই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে আমরা দৈনন্দিন কাজে যে পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি ব্যবহার করে থাকি তা থেকে সুপার কম্পিউটারগুলো কোথায় আলাদা। কী কারণেই বা তারা সাধারণ কম্পিউটার থেকে এতো বেশি শক্তিশালী?
আজকের এই পোস্ট থেকে আমরা জেনে নেব সুপার কম্পিউটার কি, সেগুলো কীভাবে কাজ করে এবং তারা কতটা দ্রুতগতিতে কাজ করতে সক্ষম সাধারণ কম্পিউটার থেকে। এছাড়াও পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী কম্পিউটারগুলোর পরিচয়ও পেয়ে যাবেন এই পোস্টে।
সুপার কম্পিউটার কী?
সাধারণ কম্পিউটারের মতোই সুপার কম্পিউটারও ডাটা স্টোর ও প্রসেস করে থাকে। তবে তা এতোটা দ্রুত গতিতে করে থাকে যা আপনার কল্পনার বাইরে।
সাধারণ কম্পিউটারের প্রসেসিং ইউনিট সাধারণত একটি থাকে। এই একটি প্রসেসিং ইউনিটের মাধ্যমেই সাধারণ কাজগুলো করে থাকে। তবে সুপার কম্পিউটারে অসংখ্য প্রসেসিং ইউনিট থাকে যা পিসির থেকে লাখ লাখ গুন দ্রুত গতিতে যে কোন কাজ করে ফেলতে পারে।
সুপার কম্পিউটার কতো দ্রুত কাজ করে তা ফ্লপস হিসেবে গণনা করা হয়। FLOPS বা Floating Point Operations Per Second যত বেশি হয় তত দ্রুত গতিতে সেই কম্পিউটার কাজ করতে পারে বলে বোঝা যায়।
সুপার কম্পিউটার কেন তৈরি হয়?
সুপার কম্পিউটার বিশেষ কিছু কাজের জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে। এসব কাজের ক্ষেত্রে অনেক দ্রুত গতির প্রয়োজন হয় বলেই সুপার কম্পিউটারের মাধ্যমে কাজগুলো করা হয়। যেসব কাজের জন্য সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ঃ
আবহাওয়ার পূর্বাভাসঃ কোটি কোটি আবহাওয়ার তথ্য একসঙ্গে দ্রুত গতিতে প্রসেস করার মাধ্যমে যতটা সম্ভব নির্ভুল আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব হয়। আর এ কাজের জন্য সুপার কম্পিউটার সবথেকে পারদর্শী। যত বেশি ডাটা যত দ্রুত প্রসেস করা যায় ততই নির্ভুল ও দ্রুতগতিতে পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব হয়।
সিমুলেশন চালাতেঃ বিভিন্ন ধরণের সিমুলেশন তৈরি করে চালাতে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। যেমন পাইলটরা শিখবার ক্ষেত্রে আসল প্লেন চালাবার আগেই সিমুলেশনের মাধ্যমে প্লেন চালানোর চেষ্টা করেন। এতে করে আসল প্লেনের মতই সবকিছু করা সম্ভব হয়। সিমুলেশনের ক্ষেত্রে অনেক ডাটা একসঙ্গে রিয়েল টাইমে প্রসেস করতে হয় বলে সুপার কম্পিউটার বেশ কাজে লাগে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণাঃ অনেকসময় অনেক বেশি ডাটা একসঙ্গে প্রসেস করবার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালানো হয়। এতে করে দ্রুতগতিতে ফলাফল পাওয়া যায় এবং একসঙ্গে অনেক রকম হিসাব করে ফেলা যায়।এছাড়াও আরও বিভিন্ন কাজে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী কিছু কম্পিউটার
এখন আমরা পৃথিবীর শক্তিশালী কিছু কম্পিউটার সম্পর্কে জানবো যেগুলোর শক্তি আপনার কল্পনাকেও হার মানাতে সক্ষম।
ফ্রন্টিয়ার (যুক্তরাষ্ট্র)
আমেরিকার বিখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এইচপি ২০২২ সালে এই সুপার কম্পিউটার তৈরি করে যা বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী কম্পিউটার হিসেবে পরিচিত। এটি সেকেন্ডে ১ কোয়ান্টিলিয়ন (10^18) হিসাব করে ফেলতে পারে যা কল্পনার বাইরে।
পৃথিবীর আর কোন সুপার কম্পিউটারের এই ক্ষমতা নেই। এতে মোট ৮,৭৩০,১১২ টি কোর আছে। পুরো কম্পিউটারের ওজন ৩.৬৩ টনের কাছাকাছি এবং এটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি! এইচপির ওয়েবসাইট থেকে এটি সম্পর্কে বিস্তারিত দেখে নিতে পারেন।
ফুগাকু (জাপান)
জাপানের বিখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ফুজিতসু এটি তৈরি করেছে ২০২০ সালে। এটি তৈরি করা হয়েছে পৃথিবীর সবথেকে জটিল সমস্যাগুলোর সমাধান খোঁজার লক্ষ্য নিয়ে। ফ্রন্টিয়ারের আগে ফুগাকুই ছিল পৃথিবীর সবথেকে দ্রুতগতির কম্পিউটার।
এতে আছে ৭,৬৩০,৮৪৮ টি কোর যা সেকেন্ডে ৪৪২ কোয়াড্রিলিয়ন হিসাব করে ফেলতে সক্ষম। এটিকে পৃথিবীর সবথেকে পাওয়ার এফিশিয়েন্ট কম্পিউটার হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ৭০০ টন ওজনের এই সুপার কম্পিউটার তৈরিতে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়েছিলো। ফুজিতসুর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন ফুগাকু সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য।
লুমি (ফিনল্যান্ড)
লুমি ইউরোপের সবথেকে শক্তিশালী কম্পিউটার হিসেবে পরিচিত। এটিও বিখ্যাত প্রযুক্তি কোম্পানি এইচপি ২০২২ সালে তৈরি করেছে। এখানে আছে ১,১১০,১৪৪ টি কোর এবং তাদের ক্লক স্পিড ১৫১.৯ পিফ্লপস। এর মূল ডিজাইনও ফ্রন্টিয়ারের মতোই যেহেতু তা একই প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে।
ফ্রন্টিয়ারের মতো এটিও পাওয়ার এফিশিয়েন্ট, একে পৃথিবীর দ্বিতীয় সবথেকে পাওয়ার এফিশিয়েন্ট কম্পিউটার বলা হয়। এই সুপার কম্পিউটার নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে।
সামিট (যুক্তরাষ্ট্র)
২০১৮ সালে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি আইবিএম এই সুপার কম্পিউটার তৈরি করে বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে। ফ্রন্টিয়ারের সাথেই ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে এর অবস্থান। এতে আছে মোট ২,৪১৪,৫৯২ টি কোর যার ক্লক স্পিড ১৪৮.৬ পিফ্লপস। আইবিএমের ২২ কোরের ৩.০৭ গিগাহার্টজ সিপিইউ দিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে। বিস্তারিত দেখে নিতে পারেন এখান থেকে।
সিয়েরা (যুক্তরাষ্ট্র)
সামিট সুপার কম্পিউটারের সঙ্গেই আইবিএম সিয়েরা সুপার কম্পিউটার তৈরি করে ২০১৮ সালে। এই সুপার কম্পিউটার মূলত আমেরিকার নিউক্লিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত কাজের জন্য তৈরি করা হয়। এতে ১,৫৭২,৪৮০ টি কোর আছে এবং ৯৪.৬৪ পিফ্লপস এর কার্যক্ষমতা। সিয়েরার বিস্তারিত পেয়ে যাবেন এই ওয়েবসাইটে।
সানওয়ে টাইহুলাইট (চীন)
২০১৬ সালে চীন তাদের নিজস্ব সুপার কম্পিউটার তৈরি করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য। তাদের এই সুপার কম্পিউটারে মোট ১০,৬৪৯,৬০০ টি সিপিইউ কোর রয়েছে যা ৯৩.০১ পিফ্লপস গতিতে কাজ করতে সক্ষম।
এটি তাদের নিজস্ব ২৬০ কোরের ১.৪৫ গিগাহার্টজ প্রসেসর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তবে চীন তাদের এই সুপার কম্পিউটার নিয়ে খুব বেশি কিছু প্রকাশ করে না নিরাপত্তার স্বার্থে।
পার্লমুটার (যুক্তরাষ্ট্র)
২০২১ সালে এইচপির সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র এই সুপার কম্পিউটার তৈরি করে। এটিও বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
এটি বর্তমানে ন্যাশনাল এনার্জি রিসার্চ সায়েন্টিফিক কম্পিউটিং সেন্টারে রাখা আছে। এখানে এএমডি এর ৬৪ কোরের ২.৪৫ গিগাহার্টজ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। মোট ৭৬১,৮৫৬ কোর রয়েছে এখানে যা ৭০.৮৭ পিফ্লপস গতিতে কাজ করতে সক্ষম। এটি সম্পর্কে বিস্তারিত পেয়ে যাবেন এই ওয়েবসাইটে।
সেলিন (যুক্তরাষ্ট্র)
২০২০ সালে বিখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া এই সুপার কম্পিউটার তৈরি করে। এই সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করেই করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণা করা হয়েছিলো। এতে মোট ৫৫৫,৫২০ টি কোর আছে যা ৬৩.৪৬ পিফ্লপস গতিতে কাজ করতে পারে।
৬৪ কোরের ২.২৫ গিগাহার্টজ প্রসেসর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই সুপার কম্পিউটার। বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন এনভিডিয়ার ওয়েবসাইট হতে।
আরো পড়ুন:
- আই ফোন সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত কোনো ?
- প্রসেসর কি ?
- বাংলাদেশে dslr ক্যামেরার দাম
- সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কি ?
- বিশ্বের সেরা 11টি জনপ্রিয় অনলাইন মোবাইল গেম।
- নতুন গেমিং ল্যাপটপ 2022
- নতুন গেমিং পিসি 2022 |
- ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দামের মধ্যে ভালো ফোন |
- কম্পিউটার ভাইরাস কি ? কম্পিউটারে ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি ?
- 10000-এর নীচে সেরা ফোন |